ফেসবুকে বিজনেস করতে হলে ওয়েবসাইট জরুরি, অবশ্যই জরুরি। টেনশনে পড়ে গেলেন? ভাবছেন এখন ৫-১০ লাখ টাকা দিয়ে ওয়েবসাইট কিভাবে বানাবেন? ব্যাপারটা এতোটাও কঠিন না যতটুকু আপনি ভাবছেন। কেন একটা বিজনেসে ওয়েবসাইট জরুরি সেটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
আপনি এটা কখনোই বলতে পারেন না যে ফেসবুক পেজটা আপনার নিজের?
হুট করে সকালে উঠে একদিন দেখলেন ফেসবুক থেকে বলা হচ্ছে আপনার পেজ থেকে আর অ্যাড দেয়া যাবে না, পেজ থেকে আর অ্যাড দেয়া যাবে না আর পেজ নাই একই কথা, অথবা হুট করে দেখা গেলো আপনার পেজের মেসেঞ্জার ঠিক মত কাজ করছে না, অথবা ফেসবুক যদি আগামীকাল ঘোষণা করে যে তারা আর বিজনেস পেজকে সাপোর্ট দিবে না তখন? যদিও এটা বলছি না ফেসবুক এটা করবে তারপরও আপনারা যারা পেজ চালান তারা বুঝতেই পারছেন কতটা রিস্কে থাকে একটা পেজ এবং যেটার উপর আপনার কোন কন্ট্রোল নেই।
এখান থেকে বুঝতেই পারছেন নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা কতটা জরুরি অনলাইন বিজনেসে। আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য যে নাম কিনবেন সেটা ইচ্ছা করলে সারাজীবন আপনি ব্যাবহার করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার অনলাইন বিজনেসের রাস্তার মতঃ
এটা হচ্ছে আপনার অনলাইন বিজনেসের “Hub” এর মতন, আপনার অনলাইনের উপস্থিতির প্রমানের মত। যেখানে সব ধরনের ইনফরমেশন থাকবে আপনার কোম্পানির। এটা বলা যায় যে আপনার নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকার মানে হচ্ছে আপনি আপনার কাস্টোমারের কাছ থেকে Credibility অর্জন করছেন যেটা যাদের ওয়েবসাইট নেই তারা পারছে না।
ফেসবুক অবশ্যই একটা ফ্রি প্লাটফর্ম, যেখানে অনেক ভাবেই আপনার বিজনেসকে আপনি সাঁজাতে পারবেন, কিন্তু সেটা ঠিক আপনার মনের মত নাও হতে পারে, ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার নিজের ঘরের মতন অথবা দোকানের মতন যেটা আপনি আপনার নিজের মত করে সাজাবেন।আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আপনি যদি সব কিছু ফেসবুকে করেন বড় একটা কাস্টোমারের অংশ আপনি মিস করে যেতে পারেন যারা ফেসবুক ব্যাবহার করে না অথবা ফেসবুকে নিয়মিত না, আপনার ওয়েবসাইট থাকলে আপনি ফেসবুকে সেটা মার্কেটিং তো করতেই পারবেন সাথে অন্যজায়গায়তেও।
ব্রান্ডিং এবং পেশাদারিত্ব প্রকাশ পায়ঃ
ফেসবুক পেজ কিন্তু দেখতে একই রকম, আপনি এটাকে চেঞ্জ করতে পারবেন না, হ্যা এটাকে আপনি বিভিন্ন ভাবে নিজের মত করে নিতে পারবেন প্রফাইল ফটো, কাভার ফটো দিয়ে ইত্যাদি দিয়ে তারপরও এখানে অনেক লিমিটেশন্স আছে, অন্তত আপনি এটা বলতে পারবেন না যে ফেসবুক পেজ হচ্ছে ওয়েবসাইট এর বিকল্প।
আপনি যখন ওয়েবসাইট বানালেন তখন একটা দুয়ার খুলে গেলো আপনার অনলাইন বিজনেসের। আপনি এখানে নিজের প্রোডাক্ট সুন্দর ভাবে সাঁজাতে পারবেন এবং অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন থাকবে সেটার উপর আপনার, আপনি নিজের মত করে আপনার কাস্টোমারকে যা দেখাতে চান সেটাই দেখাতে পারবেন। আর একজন ক্রেতা যখন দেখে একটা কোম্পানির ওয়েবসাইট আছে সেটা তার মধ্যে একধরনের প্রভাব ফেলে যেটা অনলাইন বিজনেসের জন্য উপকারি।
ফেসবুক পেজের কার্যকারিতাতে অনেক সীমাবদ্ধতাঃ
আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন না ফেসবুক পেজে, এমনকি ফেসবুক পেজের যে “About” সেকশন আছে সেখানেও কি আসলে আপনার নিজের মত করে সব কিছু সাজানোর স্বাধীনতা আছে? আপনি নিজের মত করে আপনি কি সার্ভিস দিচ্ছেন, সেগুলার প্রাইসিং কেমন, আপনাদের টিম মেম্বারের তালিকা আরো অনেক কিছু যা আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট এ দেখতে পাই সেটা কিন্তু ফেসবুকে করা সম্ভব হয় না।
সব মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে নাঃ
একটু আগে বলেছি এটা, যে সব ধরনের মানুষ ফেসবুক ব্যাবহার করে না তাই আপনি অনেক ক্রেতা হারাতে পারেন শুধু মাত্র ফেসবুক পেজ নির্ভর হলে, আবার এমনও না যে যারা ফেসবুক ব্যবহার করছে তারা সবাই আপনার পেজে আছে, আপনার পোস্টের নোটিফিকেশন্স দেখছে ইত্যাদি। আর অরগানিক রিচের কি অবস্থা সেটা তো আপনারা জানেনই।
ফেসবুকে সবাই কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে নাঃ
আপনি যখন কোন কিছু কিনতে চান তখন সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনি কি করেন? ফেসবুক ঘুরে বেড়ান নাকি গুগলে সার্চ করেন? আমার মনে হয় গুগলে সার্চ করেন, এবং সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেন যে কোন প্রোডাক্টটি আপনি কিনবেন, ফেসবুক থেকেও সেল হয়, অনেক সেল হয়, কিন্তু সেখানে বেশিরভাগ মানুষই কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে যায় না। তাই আপনার প্রোডাক্ট আরো স্পেসিফিক কাস্টোমারের কাছে নিতে আপনার একটা ওয়েবসাইট দরকার সেটা বুঝতেই পারছেন। আপনার ওয়েবসাইট থাকলে একজন ক্রেতা যখন গুগলে সার্চ করবে তখন সে আপনার ওয়েবসাইট থেকে আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নিতে পারে।
কম্পিটিশন টিকে থাকতে হলেঃ
ধরেন একটা কোম্পানির ফেসবুক পেজও আছে আবার ওয়েবসাইটও আছে, আবার একটা কোম্পানির শুধু ফেসবুক পেজ আছে ওয়েবসাইট নেই, তাহলে ক্রেতারা কোন কোম্পানিকে বেশি গুরুত্ব দিবে? হতে পারে যার ওয়েবসাইট আছে তার মান ভালো না তারপর মনস্তাত্ত্বিক ভাবে মানুষ কিন্তু গুরুত্ব দিবে তাকেই যার ওয়েবসাইট আছে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য হলেও একটা ওয়েবসাইট জরুরি।
ওয়েবসাইট এর ডাটা নিয়ে রি মার্কেটিং করা সম্ভবঃ
আপনার ওয়েবসাইটে একজন ভিজিটর প্রবেশ করলো আপনি ফেসবুক পিক্সেল যদি আপনার ওয়েবসাইটের সাথে কানেক্ট করেন তাহলে ফেসবুক সেই ভিজিটরের ডাটা ট্র্যাক করবে, একটা ডাটাবেজ তৈরি হবে এবং আপনি পরবর্তী সময়ে আপনার বিগত ৩ মাস অথবা ৬ মাস অথবা ৭ দিন যে ভাবে আপনি চান সেভাবে যারা আপনার ওয়েবসাইট এ গিয়েছিলো তাদেরকে আপনার ফেসবুক পেজের কোন অ্যাড দেখাতে পারবেন। এমন কি আপনি এভাবেই সেট করতে পারবেন যে যারা আপনার ওয়েবসাইট এ গিয়েই ফিরে আসে নাই বরং কিছু সময় ছিলো শুধু তারা দেখবে আপনার অ্যাড এবং আরো বিভিন্ন সুবিধা আপনি পাবেন যদি আপনার ওয়েবসাইট থাকে।
এখন আসি বাজেটের ব্যাপারেঃ
আপনার বিজনেসের জন্য ওয়েবসাইট মানে এই না যে আপনাকে একদম আলিবাবা, অ্যামাজন, ই ভ্যালি অথবা দারাজের মত ওয়েবসাইট হতে হবে, একদমই না। খুব সিম্পল ভাবে, কম খরচে আপনি নিজের মত করে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন এবং সেটা আপনার বিজনেসের জন্য ভালো হবে, এখন CMS প্লাটফর্মে যে ওয়েবসাইটগুলা হচ্ছে সেগুলা মেইনটেইন করা অনেক সহজ তাই আপনি আপনার ওয়েবসাইট নিজেই মেইনটেইন করতে পারবেন ঠিক ফেসবুক পেজের মত।আর্টিকেল লিখছনঃ আরিফুল ইসলাম।
Leave a Reply