ফেইসবুক পেজের রিচ বাড়ানোর নিঞ্জা টেকনিক[হয়ে যান ফেসবুক পেজ গুরু]

আমরা যারা আমাদের বিজনেস অথবা সার্ভিস প্রসার করার জন্য ফেসবুক পেজ ব্যাবহার করি আমরা প্রায়ই একটা সমস্যায় ভুগি তাহল আমাদের ফেসবুক পেজের রিচ কমে যাওয়া।অনেক চেষ্টা করেও অনেক সময় রিচ ফিরে আনা যায় না।আমরা আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানবো আমরা কিভাবে আমাদের ফেসবুক পেজের রিচ বাড়াতে পারি।আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকার আসবে।তাহলে চলুন শুরু করিঃ-

অর্গানিক রিচঃ(Organic Reach): কোনো পেইড ডিস্ট্রিবিউশন ছাড়া অর্থাৎ বুস্টের মতো কাজ ছাড়া আপনার পেজ থেকে কত মানুষ আপনার কন্টেন্ট দেখছেন, সেটিকে বলা হয় অর্গানিক রিচ। পেইড প্রমোশন করলে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু রিচ পেতে পারেন। একই সঙ্গে পেইড প্রমোশন আপনার পেজের অর্গানিক রিচেও প্রভাবও ফেলতে পারে।

Organic Rich.jpg

Organic Reach,Image Credit: vexels.com

এই অর্গানিক রিচ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। একটি পোস্ট দেওয়ার পর কত মানুষ ক্লিক করছেন, লাইক করছেন, কমেন্ট করছেন সেটির অনুপাতে ওই পোস্টটি ছড়াতে থাকে। পেজ বাড়ার কারণে ২০১৬ সাল নাগাদ অর্গানিক রিচ ৫২ শতাংশ কমে গেছে।

কমার কারণঃ(The Reason For The Reduction): ফেসবুকে প্রতি মাসে ৩০ বিলিয়নের বেশি সংখ্যক কন্টেন্ট প্রকাশিত হচ্ছে। আপনার পেজে যাদের লাইক আছে, তাদের আগ্রহ বুঝে ফেইসবুক তাদের ফিডে কনটেন্ট পৌঁছায়। অর্থাৎ ওই ব্যক্তি কোন পেজে কত সময় কাটান, কী সার্চ দেন, অনলাইনে কী খোঁজেন- বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ফেইসবুক সেটি নোট করে, এরপর সেই অনুযায়ী কন্টেন্ট পৌঁছায়। আশার কথা হলো ‘অর্গানিক রিচ’ কমার এই যুগেও আপনি সফল হতে পারবেন।

The Reason For The Reduction.jpg

The Reason For The Reduction,Image Credit: dreamstime.com

অর্গানিক রিচ যত বাড়বে আপনার পেজ তত সাবলীল থাকবে। আপনার কন্টেন্ট অনুযায়ী ক্রেতা বা গ্রাহক পেজে আসবে। অর্গানিক রিচ বাড়লে আপনার ক্যাম্পেইন মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছাবে। একটা সময় পেইড ক্যাম্পেইনেও ক্লিকপ্রতি আপনার খরচ কমে যাবে।

ফেইসবুকের এই ক্লিকপ্রতি খরচের বিষয়টি নিলামের মতো। ক্লিকপ্রতি খরচ সব সময় পরিবর্তন হয়, যেটি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। সম্ভাব্য একটি হিসাব সেট করতে পারবেন।

আপনি যখন কোনো ক্যাম্পেইন শুরু করেন, তখন ফেইসবুক অটোমেটিক হিসাব করে আপনার বাজেট এবং সময় অনুযায়ী একটি বিড নির্ধারণ করে দেয়।

যেহেতু বিষয়টি নিলামের মতো তাই আপনাকে লাখ লাখ পেজের সঙ্গে ‘লড়াই’ করতে হয়। এই ‘লড়াই’ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

টাইমিংঃ(Timing): বছরের কোন মাস, সপ্তাহের কোন দিন, দিনের কোন সময় আপনি বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সেটির ওপর খরচের বিষয়টি নির্ভর করে। যে বিষয়ে, যে মাসে, যে দিনে, যে দেশে, যে শহরে, যে এলাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সেখানে সেই সময় ব্যবহারকারীদের আনাগোনা এবং অন্য পেজের পেইড ক্যাম্পেইন বেশি থাকলে আপনার খরচও বেড়ে যাবে।

Timing.jpg

Timing,Image Credit: scotwork.co.uk

এভাবে তিনটি বিষয় বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কাজ করে: এনগেজমেন্ট র‌্যাংকিং, কোয়ালিটি র‌্যাংকিং ও কনভারসেশন র‌্যাংকিং। তিনটির একটিতে কম স্কোর থাকলে খরচ বেড়ে যাবে।

যেভাবে ফেইসবুক নিউজ ফিডে পোস্ট পাঠায়ঃ(The Way Facebook Sends Posts To News Feeds): ফেইসবুকের নিউজ ফিডের প্রধান অ্যাডাম মোসেসির ব্লগ পোস্ট থেকে এ বিষয়ে ধারণা নিতে পারেন। তিনি জানান, চারটি বিষয়ের প্রতি নজর রেখে এটি করা হয়। বিষয়টি খাবারের মেন্যুর সঙ্গে তুলনা করতে পারেন।

The Way Facebook Sends Posts To News Feeds.jpg

The Way Facebook Sends Posts To News Feeds,Image Credit: howtogeek.com

ইনভেন্টরি- মেন্যুতে কী আছে? সিগনালস-এখন লাঞ্চ নাকি ডিনার টাইম? প্রেডিকশন- এই খাবার তিনি পছন্দ করবেন কি না? স্কোর-নির্দেশ দেওয়া।

অ্যাডাম জানান, একজন ব্যবহারকারী যখন লগইন করেন, তখন আরও চারটি বিষয় দেখা হয়: ১. আপনার বন্ধু ও প্রকাশক (পেজ) কী পোস্ট করছেন? ২. কে বা কোন পেজ থেকে করছেন? ৩. আপনার মন্তব্য করার সম্ভাবনা কতটুকু? ৪ প্রাসঙ্গিক স্কোর কেমন?

এসবের সঙ্গে আরও যা দেখা হয়: সম্প্রতি পোস্টটি কীভাবে পোস্ট করা হয়েছে? প্রকাশক কত সময় পরপর কন্টেন্ট পোস্ট করেন? কন্টেন্ট কত লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার আছে? ব্যবহারকারীরা কেমন হারে পোস্টে ক্লিক করছেন? একই ধরনের পোস্টে অতীতে ব্যবহারকারীরা কীভাবে রিঅ্যাক্ট করেছেন? পোস্ট সম্পর্কে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া আছে কি না? পোস্টটি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্নের উত্তর যত ইতিবাচক হবে, আপনার পোস্টের অর্গানিক রিচ তত বাড়বে। যদি রিচ কারও কমে যায়, তাহলে সতর্ক হতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো সার্বিকভাবে অর্গানিক রিচ কমার এই যুগে ঠিক কীভাবে ফেইসবুক থেকে আরও সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সোজা কথায় আপনার টাকা থাকলে বাজফিডের মতো বিনিয়োগ করতে পারেন। তাদের প্রায় অর্ধেক ভিজিটরই আসে ফেইসবুক থেকে। আকর্ষণীয় কন্টেন্ট পাশাপাশি তারা লাখ লাখ টাকার বুস্ট করে। আর যাদের এত টাকা নেই?

আপনি যদি কম খরচে আপনার কাজ সেরে নিতে চান তাহলে আপনাকে কিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে হবে।

সবকিছু স্বয়ংক্রিয় করাঃ(Automate Everything): শুধু পোস্ট শিডিউল করে দিলেই হবে না। প্রতিদিন মিনিটে মিনিটে শুধু শেয়ার দিলে হবে না। স্বয়ংক্রিয় করার এই অভ্যাসের পাশাপাশি পাঠক কিংবা গ্রাহককে ‘হিউম্যান টাচ’ দিতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানে কারা কাজ করছেন, প্রতিদিন তাদের সময় কীভাবে কাটছে সে বিষয়ে ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করতে হবে। টিমের সদস্যদের ট্যাগ করে ভিডিও আপলোড করতে হবে। আপনার পেজের ফলোয়াররা সব সময় এমন ‘হিউম্যান টাচ’ কামনা করে। এতে পেজের প্রতি ফলোয়ারদের বিশ্বাস বাড়ে। আস্থা বাড়ে। এবং তারা আপনার পেজে বেশি সময় কাটায়।

Automate Everything.jpg

Automate Everything,Image Credit: kaseya.com

শুধু প্রোডাক্ট ও সার্ভিস প্রোমোটঃ(Promote Only Products and Services): ফেইসবুক আগ্রহের ভিত্তিতে চলে; উদ্দেশ্য নয়। তাই শুধু গতানুগতিক প্রোডাক্ট ও সার্ভিস পোস্ট করে গেলে হবে না। ৮০ শতাংশ পোস্ট হতে হবে সামাজিক। না হলে পোস্ট প্রতি ক্লিক বাড়বে না। এ জন্য সুন্দর সুন্দর গ্রাফিকসে নান্দনিক মন্তব্য পোস্ট করতে পারে। ছোট ভিডিও পোস্ট করতে পারেন, যেটি হবে শৈল্পিক। মাঝে মাঝে লাইভ করতে হবে। পেজের অডিয়েন্সের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের মন্তব্য নিতে হবে।

Promote Only Products and Services.jpg

Promote Only Products and Services,Image Credit: elegantthemes.com

ইকোসিস্টেমের সঙ্গে প্রতারণাঃ(Cheating With The Ecosystem): চটকদার শিরোনামে ৫ ডলারের বিনিময়ে ৫ হাজার ‘ভুয়া’ লাইক কেনার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এক ঘণ্টায় ১০টি নিম্নমানের আপডেট দিয়ে গ্রাহকদের ঠকানো যাবে না। এতে টাকা এবং আপনার মূল্যবান সময় উভয়ের অপচয় হয়। ফেসবুক বিশেষ অ্যালগরিদম দিয়ে এসব প্রতরনা খুব সহজেই ধরে ফেলে। তখন আপনার পেজের রিচ তো কমেই এবং একই সাথে গ্রাহকদের কাছে আপনার পেজের সুনামও নষ্ট হয়।

Cheating With The Ecosystem.jpg

Cheating With The Ecosystem,Image Credit: hernaes.com

অ্যাডএক্সপ্রেসো তিনটি পেজ নিয়ে একটি জরিপ চালিয়ে এ বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে। নিজেদের তিনটি ফ্যান পেজে তারা অভিন্ন ভিডিও পোস্ট করে সবগুলো বুস্ট করে।

এর মধ্যে তাদের দুটি পেজের লাইক ছিল কেনা। যাদের মধ্যে অনেকগুলো ভুয়া। দেখা গেছে, ওই দুই পেজের ভিডিওতে অর্গানিক এনগেজমেন্ট নেই বললেই চলে।

ফ্যান ব্যাজে নজর দেওয়াঃ(Fan Badge Attention): আপনার ফ্যান গ্রুপে শুধু অনুসারী বাড়াতে থাকলে কোনো লাভ হবে না। কন্টেন্ট ভালো না হলে বরং রিচ কমতে থাকবে। এর মানে হলো, আপনার প্রাসঙ্গিক পোস্ট দিতে হবে। কন্টেন্ট তৈরিতে পরিশ্রম করতে হবে। এমন কন্টেন্ট দিতে হবে যা মানুষের জন্য উপকারী।

Fan Badge Attention.jpg

Fan Badge Attention,Image Credit: thinksocialsmm.net

অর্গানিক রিচ বিশ্লেষণঃ(Organic Reach Analysis): পেজের সর্বশেষ অবস্থা বুঝতে চাইলে আপনাকে প্রতিনিয়ত অর্গানিক রিচ বিশ্লেষণ করতে হবে। অর্গানিক রিচ বিশ্লেষণ করতে আপনার ফেসবুক পেজে গিয়ে ‘Export Data’ থেকে ডেটা দেখতে হবে। ফেসবুক পেজের ওপরের দিকে ‘Insights’ অপশনে ক্লিক করলে একদম ডানদিকে ‘Export Data’ দেখতে পাবেন। এই অপশনে গেলে আপনি ‘Page data’ এবং ‘Post Data’ অপশন পাবেন।

Organic Reach Analysis.jpg

Organic Reach Analysis,Image Credit: neilpatel.com

এখান থেকে পোস্ট ডেটা দেখাটা বেশি দরকারি। পেজ ডেটা থেকে পাবেন আপনার পারফরম্যান্সের অবস্থা। অন্যদিকে পোস্ট ডেটা থেকে বুঝতে পারবেন কোন ধরনের পোস্ট বেশি মানুষ দেখেছে কিংবা বেশি পছন্দ করেছে। আর এটাই মূলত পার্থক্য গড়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Trying to access array offset on null in /home/bcsaid/instabangla.com/wp-content/themes/disto/single.php on line 260