কন্টেন্ট রাইটিং এর খুঁটিনাটি পর্ব -১ এ আমরা জেনেছিলাম কন্টেন্ট রাইটিং কি? ও কত প্রকার?এরপর আমরা জেনেছিলাম কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার যোগ্যতা এবং কন্টেন্ট রাইটারদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পর্কে। আমরা চেষ্টা করবো এ পর্বে নতুন কিছু সহজভাবে তুলে ধরার। তো, প্রথম পর্বের ন্যায় পাঠকের সুবিধার্থে আমরা কন্টেন্ট রাইটিং কি? ও কত প্রকার এ পর্বে ও এটা তুলে ধরছি।
কন্টেন্ট রাইটিং কি? ও কত প্রকার?(What is Content Writing? How Many Types?):
কন্টেন্ট রাইটিং কি এটা যদি সহজ ভাষায় বলি তাহলে এটি হচ্ছে যেকোনো একটি বিষয়ের উপর কিংবা যেকোনো একটি বিষয়বস্তুর উপর লিখা৷ এই লিখা সাধারণত ৩০০-৫০০ শব্দ, ৫০০-১০০০ শব্দ কিংবা ১ হাজার থেকে দুই – তিন- পাঁচ হাজার পর্যন্ত ও হতে পারে৷ অর্থাৎ, আপনি যেকোনো টপিক কিংবা বিষয়বস্তুর উপর আপনার ইচ্ছানুযায়ী শব্দ সংখ্যার ভিতরে একটি কন্টেন্ট লিখবেন। কন্টেন্ট রাইটিং ব্যাপারটা আমরা আর্টিকেল রাইটিং হিসেবে ও জানি।
কন্টেন্ট রাইটিং অনেক ধরনের আছে। যেমন : এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট রাইটিং, এফিলিয়েট কন্টেন্ট রাইটিং, ব্লগ কন্টেন্ট রাইটিং, ই-বুক, ম্যাগাজিন কন্টেন্ট রাইটিং, পত্র পত্রিকায় কন্টেন্ট রাইটিং, একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ট্রান্সলেশন, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন রাইটিং, নিউজ রাইটিং, শর্ট স্টোরি / আর্টিকেল রাইটিং। তাছাড়া আর ও অনেক ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং করা যেতে পারে।
কিভাবে একজন কন্টেন্ট রাইটার হওয়া যায়?(How to Become a Content Writer?):
শুরুর দিকে একজন কন্টেন্ট রাইটার এর মাথায় ভুতের মতো একটি প্রশ্ন চাপে, সেটি হচ্ছে আমি কিভাবে কন্টেন্ট রাইটার হতে পারবো? দুনিয়ার সব বিখ্যাত লেখকদের মতো বাংলাদেশের লেখকরা ও এ ব্যাপারে বলেছে,’একজন ভালো লেখক একজন ভালো পাঠকও বটে। কারণ ভালো পাঠক না হলে, ভালো লেখক হওয়া যায় না। তবে একজন ভালো পাঠক; যিনি কিনা লেখক নন, তিনি অনেক বই পড়ার মাধ্যমে নিজের মধ্যে লেখক সত্ত্বার বিকাশ ঘটাতে পারেন। তাই বলা যায়, পাঠক আর লেখকের এই সম্পর্ক খুবই নিবিড়; একে অপরের পরিপূরক। পাঠক হওয়া খুবই সহজ। সামনে একটা বই নিয়ে বসে পড়া শুরু করলেই পাঠক হওয়া যায়। ‘ এ টাইপের কথা কিংবা এ ধরনের কথা দুনিয়ার অনেক অনেক লেখক বলেছেন এবং বলে যাচ্ছেন ও। আমি যদি তোমাদের সামনে আমার কথাই বলি না কেনো? কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে যে বই পড়তে হবে না কিন্তু। আমি পত্রিকা, গুগল থেকে অন্যদের আর্টিকেল, ব্লগ পোস্ট পড়েই অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি এবং বুঝতে পেরেছি। মূল সূত্র একটাই কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার আগে আপনার পছন্দের বিষয়বস্তুর উপর অন্যদের লিখা/ কন্টেন্ট পড়ুন।
একজন কন্টেন্ট রাইটার হতে হইলে যে গুনাবলী থাকা আবশ্যকঃ(To be a Content Writer You Must Have These Qualities):
সবখানেই দেখবেন সুন্দর এবং সাবলীল ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে করে পাঠকদের যে কোন লেখা বুঝতে অসুবিধা না হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার লেখার মধ্যে একটি প্রফেশনাল টাচের পাশাপাশি কাউকে সহজে বুঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে।সহজ এবং প্রাণবন্ত লেখার পাশাপাশি আপনার লেখার মধ্যে বৈচিত্রতা নিয়ে আসতে হবে। তবে এর পাশাপাশি লেখার মধ্যে যাতে করে বানান ভুল একদমই কম থাকে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
যে কোন নতুন বিষয় সম্পর্কে পড়ে তার উপর দ্রুত একটি আর্টিকেল তৈরি করতে পারার অভ্যাস করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো একদমই আপনার ধরা ছোঁয়ার বাইরে সেগুলোর দিকে না যাওয়াই ভালো।যেমন ধরুন আপনি একজন মানবিক শাখার ছাত্র ছিলেন এখন আপনার ডাক্তারি আর্টিকেল রিসার্চ করে না লিখতে যাওয়াই ভালো। তবে অনুবাদ করার ক্ষেত্রে সেটা আপনি করতে পারেন। কেননা যিনি ইংরেজি আর্টিকেলটি লিখেছেন তিনি হয়ত যথেষ্ট রিসার্চ করেই লিখেছেন। আপনাকে শুধুমাত্র সে লেখাটি সুন্দর এবং সহজ ভাষায় অনুবাদ করে দিলেই হয়ে যাচ্ছে।
যেহেতু আপনি লেখালেখি করছেন অনলাইনে তাই ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে মোটামুটি আইডিয়া থাকলে সেটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক জটিল কিছু জানতে হবে না, কেবলমাত্র কীভাবে একটি ওয়েবসাইটে লেখা আপলোড দিতে হয় এইসব বিষয়ে সামান্য জানা থাকলেই চলবে। আমরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করেছি তখন দেখেছি আমাদের শিক্ষকরা পরীক্ষার সময় বলতো খাতাটা রিভাইস দেয়ার জন্য ঠিক সেই কাজটা করবেন আপনি এখন। মানে, আপনি পিসি/ স্মার্টফোন যেখানেই আর্টিকেলটি লিখুন না কেনো সেখান থেকে আর্টিকেলটি বার বার পড়ুন। দেখবেন অনেক বানান ভুল ও হতে পারে এবং মন চাইবে এই শব্দের জায়গায় এই শব্দ ব্যবহার, সেই শব্দের সাথে অন্য একটি শব্দের ব্যবহার করতে। আর যখন একটি শব্দের জায়গায় অন্য একটি শব্দ ব্যবহার করতে মন চাইবে তখনই আপনি এডিট করে নিবেন। কেননা একজন লেখক যখন লেখাটি লিখে থাকেন তখন তার হয়ত একটি বাক্য নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ থাকে না। তবে এডিট করার সময় বাক্য গঠন এবং শব্দ চয়ন সঠিক হচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। তাই নিজের লেখাটিই বারবার পড়ুন এবং এডিট করে সুন্দর করে তুলুন। যাতে করে লেখাটি পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে।
অনেকের সমস্যা লিখা এক নাগাড়ে লিখেই যায়, লিখেই যায়। কিন্তু নিজের উন্নতি নিয়ে ভাবেই না তারা। ধরুন আপনি যদি প্রথম আলোর লেখাগুলো পড়তে যান তাহলে দেখবেন লেখাগুলোর মধ্যে একই ধরনের স্টাইল বিদ্যমান। আবার রোর-মিডিয়ার লেখাগুলো পড়ে দেখুন সেগুলো একদমই আলাদা এক স্টাইলে লেখা। ঠিক এমনই কোন সাহিত্য পাতার লেখা দেখলে আপনার মনে হতে পারে লেখা এবং বাক্য বিন্যাস এখানে অন্য সবকিছু থেকে একদমই আলাদা।আপনি যদি একজন ভালো মানের লেখক বা কন্টেন্ট রাইটার হতে চান তাহলে এই বিভিন্ন ধরনের লেখার স্টাইল রপ্ত করে নিন। বেশি বেশি পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী আলাদা আলাদা লেখার স্টাইল প্র্যাকটিস করুন। শুধুমাত্র প্র্যাকটিস করার জন্যও বেশ কিছু ধরনার আর্টিকেল লিখুন।
কন্টেন্ট রাইটিং এর শুরুতে যে জিনিশটা আপনার জানা উচিত?(Things You Should Know at The Beginning of Content Writing):
আমরা অনেকেই যখন নিজের জীবনের প্রথম আর্টিকেল লিখি তখন থেকেই টাকা সম্মানী এই জিনিশগুলোর চিন্তা করি। কিন্তু এটা ভুল, একদমই ভুল৷ প্রথমত, একদম শুরুতে নিজের নাম সহ অনলাইনে কোথাও প্রকাশ করা যায় কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। একদম শুরুর দিকে কখনই কত মূল্যে লেখাটি প্রকাশিত হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন না। লক্ষ্য করুন যে ভালো কোন ওয়েবসাইটে লেখাটি প্রকাশিত হচ্ছে কি না।অর্থাৎ আপনার অনলাইন পোর্টফলিও বৃদ্ধি করুন।
দ্বিতীয়ত, নিজের প্রকাশিত আর্টিকেলটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশি বেশি শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন যে আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছেন।এভাবে আপনার বেশ কিছু লেখা যদি নাম সহ কোন বড় বড় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার লেখার দাম নিজ থেকেই বেড়ে গেছে। পরবর্তীতে আপনি বেশ ভালো দামেই নিজের লেখা বিক্রি করতে পারছেন।
নিজের লিখার মান কিভাবে বাড়াবেন?(How to Increase The Quality of Your Writing?):
আপনি যে বিষয়বস্তুর উপর লিখার চিন্তা করেন সেই বিষয়ের উপর যারা অভিজ্ঞ রাইটার আছেন তাদের কয়েকটা লিখা পড়ুন আগে। সেখান থেকে আপনি বেশ ভালো ধারনা পাবেন। প্রয়োজনে তাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় কানেক্টেড হওয়ার ও চেষ্টা করুন৷
প্রিয় পাঠক, আজ আর নয়৷ পরবর্তীতে আপনাদের সামনে নতুন কিছু নিয়ে আশার চেষ্টা রেখে আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি ধন্যবাদ৷
Leave a Reply