গুগল অ্যাডসেন্স মূলত টেক জায়ান্ট গুগল এর একটি এডভার্টাইসিং প্রোগ্রাম,যা ২০০৩ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।এবং শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী গুগল অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইট এর কন্টেন্ট পাবলিশারদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত হয়ে আছে।২০০৩ সালে শুরু হবার পর থেকে গুগল তাদের অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামে অনেক কিছু পরিবর্তন এনেছে।শুরুতে শুধু মাত্র কয়েকটি ভাষা সাপোর্ট করলেও এখন অনেক গুলো ভাষার পাশাপাশি আমাদের বাংলা ভাষাও গুগল অ্যাডসেন্স সাপোর্ট করছে।ফলে আমাদের জন্য অ্যাডসেন্স এর অনুমতি পাওয়া এবং কাজ করা অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছে।আজকে আমরা এই পোস্ট এর মাধ্যমে জানব কিভাবে আমরা অ্যাডসেন্সে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করব এবং কিভাবে কাজ করব।
আপনি হয়ত অনেকের মুখেই শুনে থাকবে যে,সে গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করে।কিন্তু সে হয়ত আপনাকে বিস্তারিত বলেনি যে গুগল অ্যাডসেন্স কি,কিভাবে অ্যাডসেন্সে কাজ করতে হয়,গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে গেলে কি কি প্রয়োজন।এসব প্রশ্ন যদি আপনার মনে থেকে থাকে তাহলে এই আর্টিকেল সুধুই আপনার জন্য।আপনি যদি শুধু বাংলাতে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারেন তাহলেই গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে পারবেন,কারন কিছু দিন আগেও গুগল অ্যাডসেন্স বাংলা ভাষা বুঝত না,বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট দিয়ে অ্যাডসেন্স আপ্পলাই করলে গুগল সরাসরি বলে দিত,গুগল অ্যাডসেন্স বাংলা ভাষা বুঝে না সুতরাং আমরা আপনার ওয়েবসাইট কে অনুমোদন করতে পারছি না।এখন অবশ্য সেই সমস্যা নাই কারন গুগল অ্যাডসেন্স এখন বাংলা ভাষা বুঝে এবং বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স অনুমোদন করে।
গুগল অ্যাডসেন্স এর ইতিহাসঃ
গুগল অ্যাডসেন্স ২০০৩ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।গুগল অ্যাডসেন্স যখন শুরু হয় সেই সময় থেকেই অনেকে বাংলাদেশ থেকে অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে আসছে এবং তাদের উপার্জিত অর্থ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকেই উত্তোলন করেছে।আরও অবাক করা বিষয় হল আমি যখন এই আর্টিকেল লিখছি তখন সারা পৃথিবীব্যাপি ১১.১ মিলিয়ন ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স এর অ্যাড ব্যাবহার হচ্ছে।সুতরাং এই সংখার দিকে খেয়াল করলেই গুগল অ্যাডসেন্স এর জনপ্রিয়তা বোঝা যায়।
গুগল অ্যাডসেন্স কেন?
গুগল অ্যাডসেন্স সারা পৃথিবীব্যাপি একটি সুপরিচিত এডভার্টাইসিং প্রোগ্রাম,যেহেতু এই অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামটি গুগল পরিচালনা করে সেহেতু সাবাই এই মাধ্যমটিকে তাদের পণ্য অথবা সেবার প্রচার এর জন্য বিশ্বাস করে থাকে।আপনার যদি কোন ওয়েবসাইট থেকে এবং ওয়েবসাইট টি গুগল অ্যাডসেন্স এর নীতিমালা মেনে তৈরি করা হয় তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইট দিয়ে খুব সহজেই অ্যাডসেন্স থেকে আয় করতে পারবেন।কিন্তু কিভাবে আয় করব?এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে এর লেখা শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
গুগল অ্যাডসেন্স এর উপার্জন পদ্ধতি কেমন?
CPC অর্থাৎ Cost Per Click এর মাধ্যমে গুগল আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট থেকে কেমন আয় হবে তা নির্ধারণ করে দিবে।সিপিসি পদ্ধতি এর মানে হল আপনি যখন আপনার কোন ওয়েবপেজে গুগল অ্যাডসেন্স এর অ্যাড রাখবেন এবং আপনার ভিসিটর সেই অ্যাড এর উপর ক্লিক করলে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ গুগল আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে যোগ করে দিবে।তবে কোন অ্যাডে ক্লিক করলে আপনি কত আয় করবেন তা আপনার সিটিআর অর্থাৎ ক্লিক থ্র রেট এর উপর নির্ভর করে।আসুন একটি উধারনের মাধ্যমে এই বিষয়তা ক্লিয়ার হওয়া যাক,ধরুন আপনি আপনার ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স এর অনুমোদন পেয়েছেন এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স এর অ্যাডও প্লেস করেছেন।এখন ধরুন আপনার কোন পেজ ৪০০ বার দেখা হয় এবং আপনার ভিসিটর এই ৪০০ বার পেজ ভিউ এ মাত্র ৪ বার অ্যাড এ ক্লিক করে,এবং প্রতি ক্লিকে আপনি ০.২৫ ডলার করে পান তাহলে আপনার আয় হবে ০.২৫*৪=১ ডলার।এভাবে আপনার পাজ ভিউ এবং ক্লিক সংখ্যা বারলে আপনার উপার্জনও বাড়বে।এখন আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন আসছে যে ভিসিটর যদি শুধু আমার সাইট ভিসিট করে চলে যায়!তারা যদি আমার ওয়েবসাইট এর কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করে তাহলে কি আমি কোন উপার্জন করতে পারব না?হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন,আপনার এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে এর পরের পারাগ্রাফ খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
ভিসিটর যদি শুধু আমার সাইট ভিসিট করে চলে যায়!তারা যদি আমার ওয়েবসাইট এর কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করে তাহলে কি আমি কোন উপার্জন করতে পারব না?
হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন,আপনার ভিসিটর যদি শুধু আপনার অ্যাড দেখে এবং কোন ক্লিক না করে তবুও আপনি অ্যাডসেন্স এর ইসিপিএম পদ্ধতিতে উপার্জন করতে পারবেন।ধরুন আপনার ভিসিটর আপনার পেজ ১০০০ ভিউ করে প্রতিদিন,তাহলে আপনি এই ১০০০ ভিউ এর জন্য ১ ডলার করে পাবেন এভাবে প্রতি মাসে আপনি ৩০ ডলার ইনকাম করতে পারবেন।ঠিক একইভাবে যদি আপনার ভিসিটর বেড়ে ৪০০০ হয়ে যায় তাহলে আপনি আপনি প্রিতিদিন ৪ ডলার করে মাসে ১২০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্স পিন ভেরিফিকেশন কি?
গুগল চায় তাদের প্রত্যেক পাবলিশার যেন তাদের দেশ থেকেই তাদের দেশের ঠিকানা ব্যাবহার করে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যাবহার করে।এর জন্য গুগল আপনার এড্রেস ভেরিফাই করে থাকে।আপনি অ্যাডসেন্সে আবেদন করার সময় আপনি যে এড্রেস দিয়ে আবেদন করেছিলেন আপনার অ্যাডসেন্সে ১০ ডলার আয় হবার পর গুগল সেই এড্রেসে একটি ভেরিফিকেশন লেটার সেন্ট করবে,লেটার হাতে পাবার পর ৬ সংখার পিন নাম্বার দিয়ে আপনার এড্রেস ভেরিফিকেশন করতে হবে।
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে উপার্জিত অর্থ কিভাবে পাব?
আপনার ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ এর পরিমান আপনি আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে লগিন করলেই দেখতে পারবেন।অ্যাডসেন্স এর মিনিমাম পে আউট হল ১০০$ সুতরাং ১০০ ডলার হলেই আপনি আপনার উপার্জিত অর্থ আপনি বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন।এর জন্য বিশেষ কোন কিছু আপনাকে করতে হবে না।আপনি শুধু অ্যাডসেন্স এর পেমেন্ট অপশনে আপনার ব্যাংক এর ইনফো যোগ করলেই অ্যাডসেন্স আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনার উপার্জিত অর্থ সেন্ট করবে।আপনার উপার্জিত আয় গুগল অ্যাডসেন্স প্রতি মাসের ২১ তারিখে পে করবে।
আমার ওয়েবসাইট এর ভাষা বাংলা হলে কি অ্যাডসেন্স সাপোর্ট করবে?
আপনি এই প্রশ্ন করেছেন তার মানে হল আপনি এই আর্টিকেল শুরু থেকে মনোযোগ দিয়ে পরেননি।আমি আপনাকে অনুরধ করব আর্টিকেলটি আবার শুরু থেকে পড়ার জন্য।তারপরেও আমি এখানে উত্তর টি দিয়ে দিচ্ছি,আপনি যদি শুধু বাংলাতে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারেন তাহলেই গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে পারবেন,কারন কিছু দিন আগেও গুগল অ্যাডসেন্স বাংলা ভাষা বুঝত না,বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট দিয়ে অ্যাডসেন্স আপ্পলাই করলে গুগল সরাসরি বলে দিত,গুগল অ্যাডসেন্স বাংলা ভাষা বুঝে না সুতরাং আমরা আপনার ওয়েবসাইট কে অনুমোদন করতে পারছি না।এখন অবশ্য সেই সমস্যা নাই কারন গুগল অ্যাডসেন্স এখন বাংলা ভাষা বুঝে এবং বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স অনুমোদন করে।
গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে কি কি লাগবে?
গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে চাইলে আপনার একটি ওয়েবসাইট লাগবে,সেটি হতে পারে ফ্রী ওয়েবসাইট অথবা পেইড।কারন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আপনাকে ফ্রীতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে দিবে যেমনঃ ব্লগার,ওয়েবলি ইত্যাদি।এই মুহূর্তে এই দুইটির ছাড়া অন্য গুলার নাম মাথায় আসছে না,পড়ে মনে পড়লে এই পোস্ট আপডেট করে দিব।আপাতত আপনি যদি ফ্রী ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে এই ২ টি প্লাটফর্ম ব্যাবহার করতে পারেন।ভুলেও যে সেই প্লাটফরমে আপনি ফ্রী ওয়েবসাইট বানাবেন না,কারন সব ফ্রী প্লাটফর্ম আপনাকে অ্যাডসেন্স ব্যাবহার করতে দিবে না আবার গুগল ও আপনাকে যে সে প্লাটফর্মে তাদের অ্যাডসেন্স এর অনুমোদন দিবে না।
তবে আমার মতামত হল আপনি যদি প্রফেশনাল ভাবে গুগল অ্যাডসেন্সে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই পেইড ওয়েবসাইট তৈরি করবেন।একটি পেইড ওয়েবসাইট তৈরি করতে ২০০০ টাকা এর মত খরচ হবে।
ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করব?
ডোমেইন হোস্টিং কেনার পর আপনাকে আপনার হোস্টিং কোম্পানি সিপানেল দিবে।এখন আপনাকে সিপানেল থেকে আপনার পছন্দের সিএমএস ইন্সটল করে নিতে হবে।তবে আমি বলব আপনি অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস ব্যাবহার করবেন।কারন ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে আপনি খুব সহজেই একটি ব্যাবহার উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।ওয়ার্ডপ্রেসে আপনি পাবেন অসংখ্য ফ্রী থিম এবং প্লাগইন্স।
আমি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি এখন কি করব?
আমরা যেহেতু আমাদের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করব,সেই জন্য অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট কে গুগল অ্যাডসেন্স নীতিমালা অনুসারে তৈরি করতে হবে।ওয়েবসাইট তৈরি করার পর আপনার পর আপনার প্রথম কাজ হল একটি নিশ সিলেক্ট করা(নিশ এর অর্থ হল আপনি কোন বিষয়ের উপর লেখালেখি করতে চান)।নিশ সিলেক্ট করা হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইটে নিশ অনুসারে ক্যাটেগরি তৈরি করা এবং প্রতি ক্যাটেগরিতে ৮-১০ টি করে আর্টিকেল পাবলিশ করা(আর্টিকেল এর লেন্থ মিনিমাম ৬০০-৭৫০ ওয়ার্ড রাখা উচিত,তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে আর্টিকেল এর লেন্থ বড় করতে যেয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা আর্টিকেলে না লেখায় উত্তম,কেননা এতে আপনার ভিসিটর বিরক্ত বোধ করতে পারে)।ধরুন আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ৫ টি ক্যাটেগরি তৈরি করেছেন,তাহলে আপনি প্রতি ক্যাটেগরিতে ৮-১০ টা এবং সর্বমোট ৪০-৫০ টা আর্টিকেল পাবলিশ করবেন।আপনার সাইটে গুরুত্বপূর্ণ পেজ অ্যাড করবেন,যেমনঃ About Us,Contact US,Privacy Policy এবং DMCA ।
আমি আর্টিকেল পাবলিশ করেছি এখন কি করব?
আর্টিকেল পাবলিশ করার পর আমাদের কাজ হল গুগল এর সার্চ কন্সলে আমাদের সাইট অ্যাড করা এবং সাইট ম্যাপ সাবমিট করা।সাইট ম্যাপ তৈরি করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস এর গুগল এক্সএমএল সাইট ম্যাপ প্লাগইন্স ব্যাবহার করতে পারেন।
উপরের সকল কাজ সম্পূর্ণ করার পর এখন কয়েক দিন সময় দিতে হবে আপনার ওয়েবসাইট এর সকল পোস্ট এবং পেজ গুলোকে গুগলে ইনডেক্স হওার জন্য।আপনার সাইট এর কতগুলো পাজ ইনডেক্স হল তা চেক দিতে site:domainname.com এভাবে গুগলে সার্চ করে চেক করতে পারবেন।এখানে ডোমেইন নাম এর জায়গায় আপনার ডোমেইন নাম লিখে সার্চ করতে হবে।উধারনসরূপ আপনার ডোমেইন নাম ধরে নিলাম google.com তাহলে আপনার সার্চ ফরম্যাট হবে, site:google.com,এভাবে চেক করার পর যখন দেখবেন আপনার ওয়েবসাইট এর সকল পোস্ট এবং পেজ ইনডেক্স হয়ে গেছে তখন আপনি গুগল অ্যাডসেন্স এর ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স অনুমোদন চেয়ে আবেদন করবেন।
Leave a Reply