“মিঃ বিন”- কমোডি জগতের একজন সুপার হিরোর গল্প!

মিঃ বিন এর আসল নাম রোয়ান এটকিনসন। এই গুণী অভিনেতা ১৯৫৫ সালের ৬ই জানুয়ারি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।মিস্টার বিন (Mr. Bean) একটি ব্রিটিশ ১৪টি পর্ব বৈশিষ্ট্য হাস্যরস টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক। এতে রোয়ান অ্যাটকিনসন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। রোয়ান অ্যাটকিনসন, তার দুই জন সহকর্মী রবিন দ্রিসকল এবং রিচার্ড কুরটিসের সাথে একে তৈরি করেন। এর একটি পর্ব বেন এলটনও লিখেছেন। এটি প্রথম সম্প্রচার করা হয়, ১লা জানুয়ারি ১৯৯০ সালের আইটিভি-তে এবং এর শেষ পর্ব সম্প্রচার করা হয়, ১৫ই নভেম্বর ১৯৯৫ সালে যার শিরোনাম ছিল “হেয়ার বাই মিস্টার বিন অফ লন্ডন“। গোলাপ ড’ওর সহ, অনেক সংখ্যক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পায়। বিশ্বের ২০০টি দেশে অনুষ্ঠান বিক্রি করা হয়েছে, এবং দুইটি ফিল্ম এবং একটি অ্যানিমেটেড ব্যঙ্গচিত্র স্পিন-অফ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছ

যেসব শিল্পীরা নির্বাক ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে সবাইকে অবাক করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে রোয়ান অ্যাটকিনসন অন্যতম । তিনি ‘মি. বিন’ ছাড়া আরও অনেক মুভি ও অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছেন । কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছেন এই ‘মি. বিন’ অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই তার নাম ‘রোয়ান অ্যাটকিনসন’ এর বদলে হয়ে যায় ‘মি. বিন’।

গরিব পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন একজন কৃষক। প্রচণ্ড পরিশ্রমী আর মেধাবী ছিলেন তিনি। মি. বিন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুল, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবশেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই প্রথম অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। তারপর একটি কমেডি গ্রুপে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে তার কথার তোতলামির কারণে ভাল করতে পারেননি।

এবার সে ভাগ্যের চাকাকে শুধুমাত্র অভিনয়ের দিকেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে এসেও তিনি সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হন, তোতলামির জন্য অনেকগুলো টিভি শো তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেয়। হতাশায় চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে তাকে। কিন্তু এতো হতাশার পরও, সে নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। এরই মধ্যে একসময় তিনি একটি মজার ব্যাপার আবিষ্কার করলেন।

মি. বিন বলেন, ‘আমি দেখলাম, যখন আমি আমার মতো করে কথা বলি কেবল তখনই আমার তোতলামো আসে, কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কারো ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে গেলে আমি অনর্গল কথা বলে যেতে পারি।’ তিনি তার সমস্যাটিকে জয় করলেন। কিন্তু তারপরও তাকে সবাই ফিরিয়ে দিতে থাকে।

এবার দ্বিতীয় কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার চেহারা সুন্দর না এবং নায়কের মতো শরীরও নেই। ভেতরে ভেতরে তার এই অপমানকে তিনি শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টায় নামেন। যারা তাকে অবহেলা করছে, ওদেরকে তিনি ভুল প্রমাণ করেই ছাড়বেন- নিজের সাথে এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি। আর এক পর্যায়ে তিনি সেটা করিয়েও দেখিয়েছেন।

১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ‘নেভার সে নেভার এগিন’ মুভিটি। মুভিটিতে রোয়ান অ্যাটকিনসন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত ১ম মুভি। এরপরের বছর রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনয় করেন ‘ডেড অন টাইম’মুভিটিতে। এটিতে রোয়ান লিডিং চরিত্রে অভিনয় করেন।

তিনি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছেন মূলত এই মিঃ বিন চরিত্রে অভিনয় করেই এবং এই চরিত্রের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তিনি বলেছেন,আমি মনে করি এবং আমি সবসময়েই ভেবেছি যে এটির (জনপ্রিয়তার) কারণ হচ্ছে সে (মিঃ বিন) আসলে একটি বয়স্ক মানুষের দেহে আটকা পড়া একটি শিশু।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং রোয়ান এটকিনসন ডারহাম কোরিস্টার্স স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। টনি ব্লেয়ার রোয়ান এটকিনসনের চেয়ে দুই বছরের বড় ছিলেন।তাঁর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে আলাদা আলাদা ডিগ্রী আছে। এর মধ্যে নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।ক্যারিয়ারের প্রারম্ভে তিনি বেশ কিছু নাটক এবং সিনেমা করলেও বিবিসির কমেডি শো Not the Nine O’Clock News এর মাধ্যমে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

তিনি গাড়ির বিশেষ ভক্ত। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে রেনল্ট 5 GT TURBO, হোন্ডা সিভিক হাইব্রিড, ম্যাকলারেন F1, অডি সহ অনেক গাড়ি রয়েছে। তবে তিনি পোর্শে পছন্দ করেন না। তাঁর লরি চালানোর Class 1 লাইসেন্স আছে। তিনি ব্রিটিশ গাড়ি বিষয়ক ম্যাগাজিনেও লেখালেখি করে থাকেন।

২০১১ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর ঘাড়ের হাড় স্থানচ্যুত হয় এবং গাড়িটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ তবে সেই গাড়িটির বিমা করা ছিলো ফলে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সেবারই প্রথম কোনো বিমা প্রতিষ্ঠান ১ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে বাধ্য হয়।তিনি জেমস বন্ড এর ভীষণ ভক্ত। এমনকি তিনি ১৯৮৩ সালে জেমস বন্ড মুভি Never Say Never Again এর পার্শ্ব চরিত্রেও অভিনয় করেন।

তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রের নাম মিঃ বিন, যেটির নাম আসলে হওয়ার কথা ছিলো মিঃ হোয়াইট। কিন্ত মিঃ বিন হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে মিঃ হোয়াইটের নাম পরিবর্তিত হয়ে মিঃ কলিফ্লাওয়ার হয়!১৯৮০ দশকের শেষভাগে বিবিসি এর মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রির সাথে পরিচয় হয় রোয়ান এটকিনসনের। ১৯৯০ সালে সুনেত্রাকে বিয়ে করেন রোয়ান। লিলি এবং বেঞ্জামিন নামক তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। ২০১৪ সালে তাঁদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

মারাত্মক অন্তর্মুখী স্বভাবের এই অভিনেতা নিজের পরিবারের ব্যাপারে এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখতেন যে তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্মের আগে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জনও করেছেন। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয় প্রায় ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *