অপ্রতিরোধ্য বায়ার্ন মিউনিখের চ্যাম্পিয়ন লীগের চ্যাম্পিয়ন রোড

স্পোর্টস ডেস্কঃ ডি-বক্সের ভিতরে পিএসজি দলের ৫ খেলোয়াড় এর বিপরীতে বায়ার্নের ছিলো ৫ খেলোয়াড়। ডি-বক্সের বাহির থেকে বল পেয়ে বাবারিয়ানদের রাইট ব্যাক জশুয়া কিমিচ সুন্দর করে দেখে শুনে ঠান্ডা মাথায় চিপ করে বল দিলেন ফ্রি দাঁড়িয়ে থাকা বোটেং এর দিকে এবং ফ্রি হেডারে বোটেং এর ঠান্ডা মাথার হেডে এগিয়ে যায় বায়ার্ন এবং চ্যাম্পিয়ন লীগের রুপকথা লিখে৷ হিটলারের বংশধররা এভাবে ধমিনেট করবে তা তো স্বাভাবিক। প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের বলবো বায়ার্নের চ্যাম্পিয়ন লীগের শিরোপা ট্রফি রোড।

গ্রুপ পর্বে বায়ার্ন মিউনিখঃ গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্ভিয়ান চ্যাম্পিয়ন রেড স্টারকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের জাত চিনিয়ে দেয় বাভারিয়ানরা৷ দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন কিংসলে কোম্যান, এরপর গোলের দেখা পান ফর্মে থাকা লেভানডফস্কি এবং ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে প্রতিপক্ষের কফিনে শেষ পেরেক ডুকিয়ে দেন টমাস মুলার। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টটেনহামের বিপক্ষে লন্ডনে খেলতে যায় বায়ার্ন৷ সেখানে গিয়ে হ্যারি কেইন – সনদের ঘুম ও হারাম করে দিলো বায়ার্ন৷ করে বসে ৭ গোল, টটেনহ্যামের জালে একাই গুনে গুনে চার চারটি গোল করেন গিনাব্রি৷ ফলাফল টটেনহ্যামের মাঠ থেকে ২-৭ গোলের বড় জয় পায় বায়ার্ন৷ ম্যাচডে তিন এ অলিম্পিয়াকোসের সাথে ২-৩ গোলে জয় পায় বায়ার্ন, সেদিন ও বায়ার্নের হয়ে দুটি গোল করেন।

অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ২য় লেগে বায়ার্ন জয় পায় ২-০ গোলে। দলের হয়ে একটি গোল করেন লেভানডফস্কি এবং অন্যটি করেন পেরেসিচ। রেড স্টারের বিপক্ষে সেকেন্ড লেগে এওয়ে ম্যাচে ৬ গোলের জয় পায় বায়ার্ন। লেভানডফস্কি একাই করে বসেন ৪ গোল৷ আলিয়াঞ্জ এরেনায় টটেনহ্যামের বিপক্ষে সেকেন্ড লেগের ম্যাচে কিংসলে কোম্যান, কোতিনহো, মুলারের গোলে ৩-১ এ জয় পায় বায়ার্ন৷ অপ্রতিরোধ্য বায়ার্ন পৌঁছে যায় রাউন্ড অফ সিক্সটিনের মঞ্চে৷

বায়ার্নের রাউন্ড অফ সিক্সটিন ম্যাচঃ বায়ার্নের সামনে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে মোকাবিলা করে লডনের ক্লাব চেলসি৷ ১ম লেগে চেলসির ঘরের মাঠ স্টাম্পফোর্ড ব্রিজে ৩ গোল দিয়ে ১ম ম্যাচেই নিজেদের ডমিনেট খেলা দেখিয়ে দেয় বায়ার্ন। দলের হয়ে জোড়া গোল করেছিলেন জিনাব্রি, একটি করেছিলেন লেভানডফস্কি। তাছাড়া দুর্দান্ত খেলেছিলেন তরুন লেফট ব্যাক ডেভিস । প্রায় ছয় মাস পর অনুষ্ঠিত হওয়া ২য় লেগের ম্যাচে চেলসি যায় আলিয়াঞ্জ এরেনাতে৷ আলিয়াঞ্জ এরেনাতে গিয়ে ও সুবিধা করতে পারেনি ব্লুজরা৷ নিজেদের ঘরের মাঠে বায়ার্ন দিলো আর ও ৪ গোল এবং হজম করলো ১ গোল।বায়ার্নের হয়ে জোড়া গোল করেন রবার্ট লেভানডফস্কি, পেরেসিচ এবং টলিসিস করেন একটি করে গোল৷ ফলাফল ৭-১ গোলে জয়ী হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে বায়ার্ন মিউনিখ। কোয়ার্টার ফাইনাল যেখানে নিজেদের প্রতিপক্ষ ছিলো বার্সেলোনা৷

বায়ার্ন মিউনিখের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচঃ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে বায়ার্নের প্রতিপক্ষ ছিলো বার্সেলোনা। কিন্তু করোনা ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে উয়েফা সিদ্ধান্ত নেন এক লেগ করে নক আউট সিস্টেমে খেলার সিদ্ধান্ত নেন৷ জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ এ সিজনে স্কোরিং এ ছিলো বেশ এগিয়ে, দক্ষ৷ ২৯ বারের বুন্দেসলীগা চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ পর্তুগালের লিসবনে পাড়ি জমায় চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে। ২০১২-১৩ সিজনের পর এবার ও তাদের সামনে ছিলো সুবর্ণময় এক সুযোগ ট্রেবল জিতার। বায়ার্নের হয়ে সে রাতে মাত্র চার মিনিটেই দলকে লিড এনে দেন জার্মান স্ট্রাইকার টমাস মুলার। এরপর বায়ার্ন লেফট ব্যাক ডেভিসের ভুলের মাশুলে একটি আত্মঘাতী গোল পায় বায়ার্ন৷

ম্যাচের মাত্র ৩১ মিনিটে বায়ার্ন গুনে গুনে বার্সার জালে বল পাঠায় বায়ার্ন মিউনিখ। যেন ৩১ মিনিটেই বার্সাকে ছিটকে দেয় কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চ থেকে৷ প্রথমার্ধে টমাস মুলারের জোড়া গোল, ক্রোয়েশিয়ান পেরেসিচ এবং গিনাব্রির ১ গোলে ৪-১ এগিয়ে ১ম হাফ শেষ হয়৷ বিরতি থেকে ফিরে ৫৭ মিনিটে একটি গোল শোধ করেন সুয়ারেজ যদি ও প্রথমার্ধের অপ্রতিরোধ্য বায়ার্ন মিউনিখ, দ্বিতীয়ার্ধে ও অপ্রতিরোধ্য ছিলো। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধে ও বায়ার্ন বার্সার জালে গুনে গুনে ৪ গোল দিয়েছে৷ দ্বিতীয়ার্ধে গোলের দেখা পায় জশুয়া কিমিচ, রবার্ট লেভানডফস্কি। আর বার্সেলোনা দল থেকে লোনে বায়ার্ন মিউনিখে আসা কৌতিনহো বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেই জোড়া গোল করে নিজের জাত চিনিয়ে দেয়। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০১৯-২০ সিজনে ১৫২ গোল করেছে বায়ার্ন মিউনিখ, এর আগে ২০১২-১৩ সিজনে ট্রেবল জয়ী সিজনের মোট গোল থেকে একটি বেশী গোল করেছিলো বায়ার্ন৷ জয়ের পর রাইট ব্যাক কিমিচ বলেন, ‘ আমরা ছড়িয়ে খেলেছি। বার্সেলোনার বিপক্ষে ৮-২ গোলের জয় আমাদের কাছে অকল্পনীয়। ম্যাচের শুরু থেকেই আমরা ওদেরকে ছাড় দেই নাই। ” ম্যাচ জয়ের পর বায়ার্ন দুর্গ যেভাবে জয়ের উল্লাসে মেতেছিলো ঠিক তার বিপরীত অবস্থা ছিলো বার্সা শিবিরে৷

বায়ার্ন মিউনিখের সেমিফাইনাল ম্যাচঃ সেমিফাইনালের মঞ্চে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিপক্ষ ছিলো অলিম্পিক লিও৷ সেবার চ্যাম্পিয়ন লীগে বেশ ভালো ফর্ম করে সেমিফাইনালের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলো অলিম্পিক লিও৷ সার্জিও গিনাব্রি টপ কর্নারে স্টানিং গোল করেন এবং বিরতীর আগে দলকে লিড এনে দিয়ে গিনাব্রি করেন জোড়া গোল৷ ২৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার গোটা সিজন জুড়েই ছিলো গোল করার মতো দুর্দান্ত ফর্মে। রবার্ট লেভানডফস্কি যিনি বার্সেলোনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ দিয়ে নিজের ৫০ তম উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের গোল করেছেন তিনি সেমিফাইনালের মঞ্চ অলিম্পিক লিও এর সাথে গোলের দেখা পান৷ ৩২ বছর বয়সী এই পুলিশ স্ট্রাইকার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৯ চ্যাম্পিয়নস লীগের ম্যাচে গোলের দেখা পেয়েছেন এবং সে ম্যাচে গোলের মাধ্যমে সে সিজনে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৫ গোলের দেখা পান পোলেন্ডের এই স্ট্রাইকার৷ এ ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে বায়ার্ন একমাত্র দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন লীগের টানা দশ ম্যাচে জয়লাভ করেন৷ ম্যাচ জয়ের পর জশুয়া কিমিচ বলেন, ‘ ড্রেসিংরুমে আমরা অতিরিক্ত উৎযাপন করি নাই, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। ‘ যেখানে ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিপক্ষ ছিলো ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন।

বায়ার্ন মিউনিখের ফাইনাল ম্যাচঃ পুরো চ্যাম্পিয়ন লীগ জুড়ে বায়ার্ন মিউনিখের পাশাপাশি পিএসজি ও অন্য দলগুলোর সাথে ডমিনেট করে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালের মঞ্চে জায়গা পায়৷ ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিপক্ষ ছিলো ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। ম্যাচের আগেই বায়ার্ন কোচ ফ্লিক বলেছিলো তার দল হাই প্রেসিং ফুটবল খেলবে৷ ম্যাচের শুরু থেকেই দু দলের কাছেই ছিলো এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ৷ কিন্ত ভাগ্য দেবতা হয়তো চান নি এটা, রবার্ট লেভানডফস্কির বল ও সেদিন গোলপোস্টে লেগে আসে৷ আক্রমণ- পাল্টা আক্রমণে প্রথমার্ধে ম্যাচ শেষ হয় ০-০ গোলে৷ বিরতি থেকে ফিরেই বায়ার্ন মিউনিখকে লিড এনে দেন কিংসলে কোম্যান৷ ডি -বক্সের বাহির থেকে রাইট ব্যাক জশুয়া কিমিচ সুন্দর করে মাথা ছোঁয়া পাস দিলেন ফ্রি দাঁড়িয়ে থাকা কোম্যান এর উদ্দেশ্যে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফাইনালের দিন একাদশে ডাক পাওয়া কোম্যানে হেড দিয়ে গোল করে বসেন। এরপর ম্যাচ জুড়ে আর গোল না হওয়ায় ১-০ গোলে ম্যাচ শেষ হয় এবং শিরোপা উঠে বায়ার্ন মিউনিখের ঘরে৷ তারা জয় করে মৌসুমের ট্রেবল ও৷

নতুন ইতিহাস লেখা হল না পিএসজি-র। অন্যদিকে ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ২০০১ ও ২০১৩ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে নিল বায়ার্ন মিউনিখ। বুন্দেশলিগা, জার্মান কাপের পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন-ত্রিমুকুট জয় বায়ার্ন মিউনিখের। খেতাব জয়ের নিরিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যৌথভাবে লিভারপুলের সঙ্গে তৃতীয় স্থানে উঠে এল বায়ার্ন। সবচেয়ে বেশিবার খেতাব জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ(১৩)। আর সাতবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে দু নম্বরে আছে এসি মিলান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *