স্পোর্টস ডেস্কঃ ব্রিটিশদের রাজার ঘরের ছেলে না হলে ও ছিলেন তিনি রাজপুত্রের মতোই৷ রিডজিওয়ে ক্লাব থেকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন ক্লাব পর্যন্ত খেলেছে ক্লাব ক্যারিয়ার। পাশাপাশি ছিলেন ইংলিশ জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যমণি হয়ে।মিডফিল্ড থেকে কখনো ফরওয়ার্ডদের উদ্দেশ্যে বল কিংবা কখনো ফ্রি-কিক থেকে চোখ ধাধানো গোল, কখনো ডি- বক্সের বাহির থেকে মন জুড়ানো গোল৷ তিনি কি শুধুই ছিলেন একজন ফুটবলার?না, ফুটবলারের পাশাপাশি তিনি ছিলেন বেশ স্মার্ট, স্টাইলিশ, এক কথায় অসাধারণ। বর্তমানে ও তিনি আছেন ফুটবলের সাথেই ইন্টার মিয়ামি এবং সালফোর্ড সিটি এই দুই ক্লাবের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি৷ আছে তার টাকার ঝনঝনানি পাঠক, বলছিলাম ব্রিটিশ ফুটবলের রাজপুত্র ডেভিড ব্যাকহামের কথা।
১৯৭৫ সালের ২ মে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড ব্যাকহাম যার পুরো নাম ছিলো ডেভিড রবার্ট জসেফ ব্যাকহাম৷ ১৯৭৫ সালের ২রা মে লন্ডনে ডেভিড এডওয়ার্ড অ্যালেন ব্যাকহাম এবং সান্দ্রা জর্জিনা ওয়েস্টের ঘরে জন্ম নেন ব্যাকহাম তার বাবা মা ছিলেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একনিষ্ঠ ভক্ত। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সব ম্যাচেই তাদের উপস্থিতি ছিল নিশ্চিত।আর মুলত তখন থেকেই রেড ডেভিলদের প্রতি একটা টান জন্মায় ব্যাকহামের মনে। ফুটবলের প্রতি তার ভালবাসা এতটাই বেশি ছিলো যে স্কুল শিক্ষক যখন তাকে প্রশ্ন করেছিল তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? তখন তিনি বলেছিলেন- আমি ফুটবলার হতে চাই। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তুমি পেশা হিসেবে তুমি কি বেছে নিতে চাও?তিনি বলেছিলেন, এটাই একমাত্র জিনিস যা আমি হতে চাই।
ফুটবলের প্রতি টান থেকেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লিজেন্ড ববি চার্লটনের একটি ফুটবল স্কুলে ভর্তি হন। আর সেখানেই সুযোগ মেলে ফুটবল ক্লাব বার্সার ট্রায়ালে অংশ নেয়ার। কিন্তু বার্সা হয়তো এই রত্নকে তখন সঠিকভাবে চিনতে সক্ষম হয়নি। সেখান থেকে ব্যর্থ হলেও ইংলিশ ক্লাব টটেনহাম ঠিকই চিনে নেয় বালক ব্যাকহামকে। ১৯৯০ সালে তিনি অনূর্ধ্ব-১৫ প্লেয়ার অফ দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে যোগদান করেন ম্যান ইউনাইটেড এর ইয়ুথ ক্লাবে। তখন গিগস স্কোলস’রা ছিলেন তার সতীর্থ। ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তি করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে।
ডেভিড ব্যাকহামের ক্লাব ক্যারিয়ারঃ ১৯৯৫ সালেই আবার ফিরে আসেন।সে মৌসুমে সুযোগ পান ৪ ম্যাচে। ব্যাকহামকেকে প্রধান একাদশে সুযোগ না দেয়ার মূল্য সেবার দিতে হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। এফ এ কাপের ফাইনালে তাকে স্কোয়াডেই রাখা হয়নি আর ইউনাইটেড হেরেও যায় সে ম্যাচে। তখনই ইউনাইটেড এর বস স্যার ফার্গুসন পরের মৌসুমে প্রাধান্য দিতে শুরু করেন তরুণদের।
অচিরেই দল ঘুরে দাড়ায় আর ব্যাকহামের তুখোড় নৈপুণ্যে ম্যান ইউনাইটেড ইপিএল জিতে। পরের বছর ১৯৯৬ সালে ব্যাকহাম সুযোগ পান জাতীয় দলে। সে বছরের আগস্টে মাঝমাঠ থেকে গোল করে বিশ্বকে অবাক করে দেন। এরিক ক্যান্টনারর বিদায়ে ১৯৯৭ সালে পান ম্যান ইউনাইটেড এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ৭ নাম্বার জার্সি। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে জিতে নেন ট্রেবল। বিশ্ব তখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল ব্যাকহামের দিকে। পরবর্তীতে তিনি ব্যালন ডি অ’রে নমিনেশন পেয়ে দ্বিতীয় সেরা হন। ২০০০-০১ সিজনে টানা ৩য় বারের মতো লিগ জেতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ঘটনা ছিল এটি।
স্যার ফার্গুসন একসময় তার মিডিয়ায় বাড়াবাড়ির জন্য ২০০৩ মৌসুমে বেঁচে দেন রিয়াল মাদ্রিদে রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট পেরেজ তাকে ৩৫ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি দিয়ে কিনে আনেন রিয়াল মাদ্রিদে। পেরেজ ঘোষণা দেন নতুন ইতিহাস গড়বেন ব্যাকহাম। দলে তার আগমনেই পূর্ণতা পেয়েছিল গ্যালাকটিকোরা। রোনালদো, জিদান, ব্যাকহাম, রাউল, কাসিয়াস, কার্লোস, ফিগো কে ছিলনা সেই দলে!
২০০৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবটি ৬০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ফুটবলকেন্দ্রিক ব্যবসা করেছে। তার কারনে লাভ ১৩৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
সুপার স্টার ডেভিড ব্যাকহামকে রিয়াল মাদ্রিদের ড্যারায় ভিড়িয়ে সে সময়কার ক্লাব প্রেসিডেন্ট পেরেজ সবাইকে চমকে দেন৷ মাদ্রিদের হয়ে ২৩ নাম্বার জার্সি পরেন ব্যাকহাম৷
পেরেজ ঘোষণা দেন নতুন ইতিহাস গড়বেন ব্যাকহাম। দলে তার আগমনেই পূর্ণতা পেয়েছিল গ্যালাকটিকোরা। রোনালদো, জিদান, ব্যাকহাম, রাউল, কাসিয়াস, কার্লোস, ফিগো কে ছিলনা সেই দলে।
২০০৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবটি ৬০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ফুটবলকেন্দ্রিক ব্যবসা করেছে। তার কারনে লাভ ১৩৭ শতাংশ বেড়ে যায়। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন লিগ শিরোপা। পরে সেখান থেকে যান লস এঞ্জেলসের এলএ গ্যালাক্সিতে যোগ দেন।ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে এসে সেখান থেকেই অবসর নিয়ে নেন।
জাতীয় দলের হয়ে ব্যাকহাম, ২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বেকহ্যাম মোট ৫৮টি খেলায় ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে দলের হতাশাজনক নৈপুণ্যের পর তিনি অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
তার সবচেয়ে বড় পরিচিতির অন্যতম কারণ তার জাদুকরি ফ্রি কিক এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিজস্ব জীবন। ২০১৩ সালে অবসর নেওয়ার পরও ফোর্বস তালিকায় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অবসরে যাওয়া খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। দশ বছর যাবৎ ইউনিসেফের অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তি এবং দারুণ সব বিজ্ঞাপন করে ব্যাকহাম ফুটবল জগতের বাইরে ফ্যাশন জগতেও অনেক জনপ্রিয়। স্টাইল আর দৃষ্টিনন্দন ফুটবল দিয়ে জয় করেন অসংখ্য ভক্ত সমর্থকের মন, তাইতো ব্যাকহ্যাম মানেই নতুন এক উন্মাদনার নাম।
Leave a Reply