আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জনক ও পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য। ৪ মার্চ, ১৮৭৯ জার্মানির উলমা শহরে জন্ম। বাবা ছিলেন হারমান আইনস্টাইন আর মা পাওলিন। স্কুল শেষ করে জুরিখের পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করেন অ্যালবার্ট।

আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন একজন বুদ্ধিমান। কিন্তু প্রতিভা সত্ত্বেও, তিনি জিনিস ভুলে গিয়েছিলেন। একবার আইনস্টাইন সহকর্মীর সাথে ল্যাবে ছিলেন, তখন তার সহকর্মী আইনস্টাইনকে তার ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করলেন। আইনস্টাইন টেবিলে পড়ে থাকা ফোনবুক ডিরেক্টরিটি অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। তখন তার সঙ্গী জিজ্ঞাসা করলেন আপনার নাম্বার মনে নেই? তারপরে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “বইটিতে আমি যা পেয়েছি তা আমার মনে আছে।”

আইনস্টাইন সাধারণ ও বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ,তবে খুব কম লোকই জানেন যে 1921 সালে বৈদ্যুতিক প্রভাব আবিষ্কারের জন্য তাঁকে নোবেল পুরষ্কারের ছবি দেওয়া হয়েছিল। আইনস্টাইন চুল কাটা পছন্দ করতেন না। প্রায়শই তার চুল আঁচড়ানো হত। আজ তার চুল জিনিয়াস হেয়ারস্টাইল থেকে পরিচিত। আইনস্টাইন শৈশবকালে খুব প্রতিবন্ধী শিশু হিসাবে বিবেচিত হত। তাঁর শিক্ষক এমনকি বলেছিলেন যে এটি জীবনে কিছু করতে সক্ষম হবে না।

১৯৫২ সালে আইনস্টাইন ইস্রায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এই বলে অস্বীকার করেছিলেন যে তিনি রাজনীতির জন্য নয়, তাকে বিজ্ঞানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

আইনস্টাইন যুদ্ধকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করেছিলেন। একবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে লড়াই করা হবে। তখন তিনি বলেছিলেন যে আমি জানি না তবে আমি বলতে পারি চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ পাথর দিয়ে লড়াই করা হবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মানুষ আবার পাথরের যুগে যাবে। আইনস্টাইন একটি ছবিতে ৫ ডলার এবং একটি বক্তৃতার জন্য ১০০০ ডলার নিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছে দিতেন।

সম্প্রতি আলবার্ট আইনস্টাইনের লেখা একটি চিঠি বিক্রি হলো ৩ মিলিয়ন ডলারে। কথিত এই গড লেটার লেখা হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে এবং আশা করা হচ্ছিলো যে নিউইয়র্কে নিলামে এটি হয়তো দেড় মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি হতে পারে।

নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানী ৭৪ বছর বয়সে তখন দেড় পাতার একটি চিঠি লিখেছিলেন জার্মান দার্শনিক এরিক গুটকাইন্ডের কাছে তার একটি কাজের জবাব হিসেবে।কিন্তু এটাকেই এখন দেখা হচ্ছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যকার বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি হিসেবে।কারণ মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে লেখা এই চিঠির মধ্যেই ছিলো ধর্ম ও দর্শন নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি।আর সে কারণেই নিলামে এটি আসলে বিক্রি হয়েছে প্রত্যাশার দ্বিগুণ দামে।এই চিঠিতে মাতৃভাষা জার্মান ভাষাতেই তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে জিনিয়াস এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে অবাক করার মতো ১০টি অজানা তথ্য নিচে দেয়া হলঃ-

১. যে বছর বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি মৃত্যুবরণ করেন, একই বছর স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হয়। আর বিখ্যাত বিজ্ঞানী জেমস ম্যাক্সওয়েল যে বছর মারা যান, সে বছরই পৃথিবীতে আসেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন।

২. শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় কিছু শব্দ বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই সময় তার পাশে থাকা ব্যক্তিটি জার্মান ভাষা জানতেন না। এজন্য আইনস্টাইনের শেষ কথা আজ পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে।

৩. আইনস্টাইনের কাছে অনেক তরুণ উপদেশ নেওয়ার জন্য আসতেন। তারা তার বিরাট সব সাফল্যের কারণ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক ছিলেন। এমনই একজন তার কাছে এসে বললেন, “স্যার গোটা বিশ্বের লোক আপনাকে এক নামে চেনে এবং আপনাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। দয়া করে আমাকে বলুন মহান হওয়ার মূলমন্ত্র কী?” উত্তরে আইনস্টাইন মাত্র একটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন, “সময়”।

৪. পৃথিবীর সবচেয়ে জিনিয়াস মানুষ হওয়ার পরও আইনস্টাইনের স্মৃতিশক্তি খুব দুর্বল ছিলো। তিনি মানুষের নাম, তারিখ ও টেলিফোন নম্বর মনে রাখতে পারতেন না। এমনকি নিজের টেলিফোন নম্বরটি বহুবার মুখস্ত করার পরেও মনে রাখতে পারতেন না তিনি। একবার আইনস্টাইনের এক সহকর্মী তার কাছে টেলিফোন নম্বর চাইলে তিনি ডাইরেক্টরিতে নিজের নম্বর খুঁজতে শুরু করলেন। সেই সহকর্মী তখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “স্যার আপনি নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে রাখতে পারেন না?” জবাবে আইনস্টাইন বলেছিলেন, “এমন জিনিস মনে রাখার কি দরকার যা আমি বইয়ে খুঁজলে পেয়ে যাবো?”

৫. আইনস্টাইন তার “General & Special Theory of Relativity”-এর কারণে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে “General & Special Theory of Relativity”-এর জন্য নয় বরং ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট খুঁজে বের করার জন্যই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো।

৬. পৃথিবী বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী জীবদ্দশায় কখনো কার চালাননি। কারণ, তিনি কার চালাতে জানতেন না। আর সমুদ্রে ভ্রমণপ্রিয় হওয়া স্বত্ত্বেও সাঁতার জানতেন না তিনি।

৭. বাল্যকালে আইনস্টাইনকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে করা হতো। আইনস্টাইনের স্কুলের এক শিক্ষক তো বলেও দিয়েছিলেন, “এই ছেলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না।” তার বাবা-মা ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এই ছেলেটিই একদিন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়েছিলো।

৮. ছোটোবেলায় আইনস্টাইন পড়াশুনায় খুব একটা সুবিধার ছিলেন না। তবে গণিত ছিলো তার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তিনি অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে সারাদিন গণিত নিয়েই পড়ে থাকতেন। ফলে পরীক্ষার খাতায় গণিত ছাড়া অন্য বিষয়গুলোরে খুবই বাজে নাম্বার আসতো।

৯. জন্মের সময় আইনস্টাইনের মাথা সাধারণ সদ্যজাত শিশুদের তুলনায় অনেকটা বড় ছিলো। চিকিৎসকরা ধরেই নিয়েছিলো যে, শিশুটি বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে। চারবছর বয়স পর্যন্ত আইনস্টাইন কথা বলতে পারতেন না। চারবছর বয়সে আইনস্টাইন খাবার টেবিলে বসে প্রথম কথা বলেছিলেন। তার বলা প্রথম বাক্যটি ছিলো এরকম, “এই স্যুপ এতো গরম কেন?”

১০. আইনস্টাইন মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এর পেছনে অবশ্য আরেকটা গল্প আছে। আইনস্টাইনের বাবা সুন্দর করে বৃত্ত আঁকার জন্য তাকে একটি কম্পাস এনে দিয়েছিলেন। কম্পাস পাওয়ার পর আইনস্টাইন সারাদিন ভাবতে থাকলেন, কোন শক্তির ফলে কম্পাসের একটি কাটা স্থির থেকে অন্যটি চারপাশে ঘোরে। ব্যাস, তখন থেকেই বিজ্ঞানের পোকা বনে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Trying to access array offset on null in /home/bcsaid/instabangla.com/wp-content/themes/disto/single.php on line 260