আমরা জীবনে IQ বা ‘Intelligence Quotient’ এই শব্দটি অনেক শুনেছি, তবে আইকিউ’র কিছু নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করতে হয়। যাতে করে এভারেজ বা গড়ের চেয়ে বেশি বা বেশ দুর্দান্ত স্কোরকে আলাদা করতে পারি। উচ্চ আইকিউ রয়েছে এমন লোকেরা সাধারণ মানুষের তুলনায় গভীর স্তরে ও উচ্চ গতির সাথে তথ্য গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে।
আমি এযাবৎকালের (আইকিউ’র মানদণ্ডে) সেরা দশজনের নাম উল্লেখ করব। তবে আইকিউ-এ এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সেরা দশজনের নাম সঠিক করে উল্লেখ করা আসলে বেশ মুশকিল ব্যাপার। কারন পরিসংখ্যানে তথ্যগত ভিন্নতা আবার কোন ক্ষেত্রে একটা থেকে থেকে অন্য পরিসংখ্যান আলাদা হয়। যাইহোক আমি মোটামুটি কয়েটি আর্টিকেল, ইউটিউব ভিডিও ঘেঁটে সেরা দশজনের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করলাম। অবশ্য এতে কারো দ্বিমত থাকা অস্বাভাবিক নয়।
আমরা ইতিমধ্যে জানি যে, পৃথিবীতে এমন কিছু বিজ্ঞানী ছিলেন যাদের অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিংয়ের মতো অসামান্য আইকিউ স্কোর ছিল। তবে, এখন আরো অনেকের উপরে উল্লিখিত দু’জন সেরা বিজ্ঞানীর চেয়েও বেশী আইকিউ স্কোর রয়েছেন। বুদ্ধি কেবল কিছু দেশীয় কারণের উপর নির্ভর করে না, বরং সময়ের সাথে সাথে উপযুক্ত পরিবেশেও বিকাশ লাভ করে। তাই কিছু লোক জন্মগত বুদ্ধিমান হলেও কিছু লোক সময়ের সাথে সাথে বুদ্ধিমান হয়।
সেরা ১০-জন যাদের এযাবৎকালের সর্বোচ্চ আই-কিউ (IQ) স্কোর-
01. William James Sidis – IQ Score:( 250 – 300)
উইলিয়াম জেমস সিডিস’ আইকিউ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করে নিয়েছেন যে, তাঁর আইকিউ ২৫০ থেকে ৩০০ এর মধ্যে ছিল। এর অর্থ তিনি হলেন এমন একজন ব্যক্তি যাঁর ইতিহাসে সর্বোচ্চ আইকিউ স্কোর ছিল। তিনি ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং যখন তিনি ১১ বছর বয়সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শিখতে শুরু করেছিলেন তখন তিনি আমেরিকার সর্বাধিক খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধিত সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হয়েছিলেন।
02. Terence Tao – IQ Score:( 225 – 230)
টেরেন্স টাও একজন অস্ট্রেলিয়ান গণিত বিজ্ঞানী। তাঁর বাবা-মা হংকং এ বসবাস করতেন, পরে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ২০০৬ সালে ফিল্ডস মেডেল এর সহ-গ্রহণকারী ছিলেন- ৪০ বছরের কম বয়সীদের জন্য গণিতের শ্রেষ্ঠত্ব এবং উদ্ভাবনের জন্য সেরা পুরস্কার পান। বর্তমানে টেরেন্স টাও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
03. Christopher Hirata – IQ Score: (225-230)
ক্রিস্টোফার হিরতা হলো এমন এক প্রতিভা যার বিশ্বের সর্বোচ্চ আইকিউ স্কোর। ১৯৯৯ সালে যখন তিনি সবচেয়ে কম বয়সী আমেরিকান অলিম্পিক পদার্থবিজ্ঞানের স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন, তখন বহু লোক তার প্রশংসা করেছিলেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। ক্রিস্টোফার হীরতা ১৪ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে নিবন্ধিত হয়ে ২২ বছর বয়সে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স ডিগ্রী পড়তে থাকেন।
04. Kim Ung Yong – IQ Score:( 210-230)
কিম উং ইয়ং ১৯৬৩ সালে কোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যখন তিনি ৬ মাস বয়সী ছিলেন, তখন তিনি ইংরেজি, জার্মান, কোরিয়ান এবং জাপানী ভাষায় কথা বলতে পারতেন এবং মাত্র ৩ বছর বয়সে সেগুলি পড়তে পারতেন। তার প্রতিভা প্রকাশিত হওয়ার পরে তিনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন কাজ করার জন্য এবং ১০ বছরেরও বেশি সময় নাসায় গবেষণা করেন। যাইহোক, তিনি নাসার জীবন নিয়ে হতাশ বোধ করেছিলেন, তিনি নিজের শহরে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং পরে শিক্ষকতা শুরু করেন।
05. Garry Kasparov – IQ Score: (194-200)
গ্যারি কাসপারভ যুগ যুগ ধরে দুর্দান্ত এক রাশিয়ান অভিজ্ঞ দাবা খেলার। ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি যখন তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন, কাস্পারভ সর্বদা সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছিলেন এবং তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও ছিলেন যিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কোন খেলোয়াড় তাকে পরাজিত করতে পারেননি। তাঁর প্রতিভা তাকে কেবল রাশিয়ায় নয়, সারা বিশ্বে খ্যাতিমান করে তুলেছিল। সারা বিশ্বে অদ্বিতীয় গ্যারি কাস্পারভ রাজনীতিমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্যেও বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তিনি আইবিএমের ‘ডিপ ব্লু’ কম্পিউটারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রাশিয়ার বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করতেন।
06. Marilyn Vos Savant – IQ Score: (190-198)
মেরিলিন ভোস সাওয়ান্ত ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কৈশোরে তিনি সকলের কাছে বিখ্যাত হতে শুরু করেন। ১৯৮০ সালে গিনেসে সর্বোচ্চ আইকিউ স্কোর অর্জনকারী ব্যক্তি হিসাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি ১৯০ পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন যা তখন সর্বোচ্চ আইকিউ স্কোর ছিল। গিনেস স্বীকৃতি পাওয়ার পরে মেরিলিন ভোস সাওয়ান্ট ‘Ask Marilyn’ এবং ‘Annie’s Mailbox’ সুপরিচিত লেখক হয়েছিলেন, যেখানে লোকেরা তাকে প্রশ্ন পাঠাতে পারতেন এবং তার কাছ থেকে উত্তর পেতেন।
07. Leonardo da Vinci – IQ Score: (180 – 190)
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মতো বিশেষজ্ঞরা তার আইকিউ স্কোর পরিমাপ করেন। তার সময়কালে আইকিউ স্কোর গণনার পদ্ধতি ছিল না, সে হিসাবে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আইকিউ স্কোরের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। যাইহোক, বিশেষজ্ঞরা কিছু পুরানো দলিলের পাশাপাশি তার ক্ষেত্র বিশেষে শিল্পের প্রতিভাগুলির উপর ভিত্তি করে আইকিউ ধারনা করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তার আইকিউ স্কোর ১৮০ থেকে ১৯০ এর মধ্যে হতে পারে। স্পষ্টতই তিনি যে সমস্ত চিত্রকর্ম রেখে গেছেন, সেইসব চিত্রকর্ম আইকিউ স্কোর পাওয়ার যোগ্য। যা এখনো বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করে আছে।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি কে বিশ্বের প্রথম বিখ্যাত বিদ্বান হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে (তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান সম্পন্ন) এবং তিনি ‘Renaissance Man’ ধারণাটির একটি সুস্পষ্ট থাম্বনেইল। তিনি কেবল শিল্প, ভাস্কর্যগুলিতেই বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, সঙ্গীত, গণিত, প্রযুক্তি, ভূগোল, মানচিত্র পরিমাপ ও সাহিত্যের প্রতিভাও ছিল।
08. Judit Polgar – IQ Score: (170 – 175)
দাবা খেলা এমন এক ধরণের খেলা যার জন্য মস্তিষ্কের অনেক দক্ষতা প্রয়োজন। একজন স্থানীয় দাবা খেলোয়াড়ের প্রতিভা প্রায়শই সর্বোচ্চ আইকিউ স্কোর প্রয়োজন হয় এবং বিশ্বের খুব কম লোকই এই চৌকস ও সম্মানজনক খেলায় আকৃষ্ট হয় না। জুডিট পোলগার ১৫ বছর বয়সে সেরা মহিলা দাবা খেলোয়াড় হিসাবে স্বীকৃত পায়। যখন তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ভেটেরান্স স্তরকে হারিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী খেলয়ারের খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি বিশ্ব দাবা টুর্নামেন্টের প্রথম মহিলা খেলোয়ারদের একজন যিনি এক নম্বর প্রবীণ অভিজ্ঞ গ্যারি কাসপারভকে পরাস্ত করেছিলেন। তিনি এখনো অবিচ্ছিন্ন জয়ের সম্মান বজায় রেখে খেলছেন।
09. Albert Einstein – IQ Score:( 160 – 190)
জিনিয়াস বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আইকিউ কখনো সনাক্ত করা যায়নি কারণ তিনি কখনো আইকিউ পরীক্ষা করাননি। যাইহোক, আইকিউ স্কোর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আলবার্ট আইনস্টাইনের আইকিউ স্কোর ১৬০ থেকে ১৯০ এর মধ্যে ছিল। আলবার্ট আইনস্টাইন ১৭৯ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এটি দুটি তত্ত্বের মধ্যে একটি যা আমাদের আধুনিক পদার্থবিদ্যার জ্ঞানের ভিত্তিকে সমৃদ্ধ করেছিল। তিনি পারমাণবিক বিচ্ছুরণ তত্ত্বকে সমৃদ্ধ করেন। পরমাণু অস্ত্র বিশেষত অ্যাটম বোমা বা পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সময় তিনি সময় তিনি মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
10. Stephen Hawking – IQ Score: (160 – 170)
স্টিফেন হকিং ছিলেন ইংল্যান্ডের একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ এবং একজন ব্যক্তি যার আইকিউ সর্বোচ্চ। তিনি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত কয়েকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান বই, বিশেষ করে ‘A Brief History of Time’ বইয়ের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে এই বইতে তিনি মহাজাগতিক বিস্ফোরণ, ‘Big Bang’ তত্ত্ব এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর আবিষ্কারের বর্ণনা দিয়েছেন।
‘A Brief History of Time‘ ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। যা বিশ্বের অন্যতম সেরা বিক্রিত বইয়ে তালিকায় নাম ওঠে। এটি স্টিফেন হকিং এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার অবদানকে স্বীকৃতি দিতে বিশেষ সহায়তা করেছিল এবং মানব জ্ঞান ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি বিপ্লব তৈরি করেছিল।
Leave a Reply