মেয়েটির নাম ইভা বয়সে ছোট হলেও “দায়িত্ব” অনেক বড়

মেয়েটির নাম ইভা!বয়সে অনেক ছোট হলেও এই মেয়েটির কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব।এই বয়সেই লেখা পড়ার পাশাপাশি তার দরিদ্র পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে ধরতে হয়েছে সংসারের হাল।তার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস তার বাবার মুদি দোকানের দায়িত্ব এসে পরেছে ইভার উপর।আর সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্বও এসে পরেছে ইভার উপরে।এত কিছুর পরেও পাশাপাশি তার নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছে সমানতালে।

ইভার পুরো নাম মোসাম্মৎ ইভা মনি,বয়স ১৫,ইভার বাড়ি রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কুরশা ইউনিয়নের বিষুষ্ণপুর গ্রামে।স্থানীয় তারাগঙ্ক হাইস্কুলে ১০ম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে ইভা।মেধাবি ছাত্রী হিসাবে স্কুলে এবং এলাকায় পরিচিত আছে এই ইভার।তার বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।যখন সুস্থ ছিল তখন দিন মজুরের কাজ করত ইভার বাবা,তবে বর্তমানে অসুস্থতার কারনে এখন আর কাজ করতেও পারেন না।

ইভার বাবা অসুস্থ হবার পরে তার বসত বাড়ির এক কোনে একটি ছোট মুদি দোকান দিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিল।সেই দকালে চা,পান,বিড়ি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি হত।তবে বর্তমানে অসুস্থতা বেড়ে যাবার কারনে আর দোকানে বস্তেই পারেন না ইভার বাবা।ইভার মা বাড়ির কাজ কর্ম আর ইভার বাবার দেখাশোনা নিয়েই সারাদিন ব্যাস্ত থাকতে হয়।ইভার বড় বোন ইশরাতের অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে।তাদের পাশের গ্রামেই স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন ইভার বড় বোন।ইশরাতের পরের সন্তান হল ইভা মনি এবং তাদের সব শেষ ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইমন খান বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।

মোহাম্মদ ইমন খানের বয়স মাত্র ৯ বছর হওয়াতে পরিবারের কোন দায়িত্ব তার পক্ষে নেওয়া সম্ভব না।ফলে বর্তমানে ইভার বাবার দোকান দেখাশোনার দায়িত্ব এসে পরেছে ইভার কাঁধের উপর এবং একই সাথে পুরো পরিবারের দায়িত্বও।ইভা এই দায়িত্ব সামালও দিচ্ছে খুব ভালোভাবে।

এক শেষ বিকালে ইভার সাথে দেখা হল।ইভা সেই সময় তার ছোট হাত দিয়ে যাঁতিতে সুপারি কাটছিল আর মুহূর্তেই আস্ত সুপারি কুচি কুচি হয়ে যাচ্ছিল যেন সেইটাও একটা সু-নিপুণ শিল্প।সেই সময়ই গ্রামের এক লোক চা খেতে ইভার দোকানে আসল।ইভা সুপারি কাটা বাদ দিয়ে তার দক্ষ হাত দিয়ে চা বানিয়ে সেই ক্রেতার সামনে পরিবেশন করল একজন দক্ষ বিক্রেতার মতই।

কথায় কথায় ইভা মনি জানাল,তাদের অভাবের সংসার তার উপর তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাবার পর সে স্বামীর বাড়িতেই থাকে আর ছোট ভাইটাও অনেক ছোট।তাই ইভাকেই তার পরিবারের সকল দায়িত্ব নিতে হয়েছে।ইভার স্বপ্ন সে লেখাপড়া শিখে চাকুরী করবে তখন আর তাদের কোন অভাব থাকবে না আর ছোট ভাইকেও মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে ইভার।

এক সময় ইভাকে প্রশ্ন করা হল যে,এই সকল দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে তার লেখাপড়ার কোন ক্ষতি হচ্ছে কি?এই প্রশ্নের উত্তরে ইভা জানালো-বর্তমানে করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধই রয়েছে।ফলে দোকান এবং সংসার সামলাতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।আর করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকার কারনে পড়াশোনার যে ক্ষতি হচ্ছে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্থানীয় একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছে সে।

এসময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মমতাজও আমাদের সামনে ইভার জীবনের গল্প তুলে ধরলেন।তিনি জানালেন,ইভার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে খুব কষ্টে আছে ইভার পরিবার।তার পরেও ইভা হার মানতে নারাজ নয়।এখন সমাজের বিত্তবান মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তবা ইভাদের কষ্টের দিনগুলো শেষ হয়ে যেত।