প্রিমো এইচ ৮ প্রো বনাম আইটেল এস১৫ প্রো, কোনটি ভালো?

আজকের পোস্ট এর ভেতর আমি তুলনা করব প্রিমো এইচ৮ প্রো এবং আইটেল এস১৫ প্রো স্মার্টফোন দুটি। আমার মতামত এর মাধ্যমে তুলনা করব কোন স্মার্টফোনটি আপনার জন্য ভাল হবে। মুলত তুলনার মাধ্যমে  স্মার্টফোন সম্পর্কে আরও বেশি জানা যায়।

ওয়ালটন এর চাইতে আইটেল একটু বড় তবে দুটি ডিভাইসই কার্ভ ডিজাইন হওয়ায়, ধরতে বেশ আরাম পাবেন। আর প্রিমো এইচ৮ প্রো একটু ছোটো বলে আইটেল এর তুলনায় এটি আপনার হাতে বেশ ভালভাবে এঁটে যাবে এবং গ্রিপ পেতে সুবিধা হবে। তবে আইটেল একটু বড় বলে একহাতে ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য হতে আপনার কয়েকদিন সময় লাগবে। দুটি ডিভাইসএই আপনি দুটি সিম এবং একটি এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

আইটেল এর ব্যাকপার্ট রিমুভেবল হলেও, ওয়ালটন এর ব্যাকপার্টটি নন-রিমুভেবল। ডিভাইস দুটিই প্লাস্টিক বিল্ট এবং রিয়ার প্যানেলে গ্লসি ফিনিসিং দেয়া। আর দুটো স্মার্টফোনেই আপনি গ্র্যাডিয়েন্ট ব্যাকগ্রাউন্ড পাবেন। আর যেহেতু গ্লসি ফিনিস তাই হাতের দাগ ছোপ থেকে বাঁচতে আপনাকে কভার ব্যবহার করতে হবে। ওয়ালটন এর সাথে আপনি সফট ট্রান্সপারেন্ট কেস তথা ব্যক কভার পাবেন এবং আইটেল এর সাথে আপনি হার্ড ট্রান্সপারেন্ট কেস তথা ব্যক কভার পাবেন।

ডিসপ্লে

আইটেলে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.০৮৮ ইঞ্চি এর আইপিএস ডিসপ্লে। আইটেল ৬.০৮৮ ইঞ্চি বললেও বিভিন্ন বেঞ্চমার্ক অ্যাপে এর ডিসপ্লে সাইজ দেখা গিয়েছে ৫.৯৯ ইঞ্চি। দুটি ডিভাইসএই আপনি পাচ্ছেন নচ যুক্ত ডিসপ্লে। প্রিমো এইচ৮ প্রো’তে ব্যবহার করা হয়েছে ৫.৭১ ইঞ্চি ২.৫ডি আইপিএস ডিসপ্লে, যার রেজুলেশন ১৫২০*৭২০ পিক্সেল সুতরাং এটি একটি এইচডি প্লাস ডিসপ্লে।

ফোন এর লাইট অফ অবস্থায় ওয়ালটন এর ডিসপ্লে দেখায় একদম কালো, তবে আইটেল এর ডিসপ্লে একদম কালোর বদলে হালকা গ্রে দেখায়। যেটা দুই ডিসপ্লে দুটি ভিন্ন কোয়ালিটির বোঝায়। যার প্রভাব একটু দেখা যায়, ওয়ালটন এর ডিসপ্লে আইটেল এর তুলনায় কালার, কনট্রাস্ট এর দিক থেকে ডিপ, এতে ডিসপ্লেটি একটু বেশি কালারফুল মনে হবে। আর ভিউইং এঙ্গেল এবং সাইড বেজেল দুটো ডিভাইসএরই ঠিকঠাক। তবে এইদিক দিয়ে কোয়ালিটি ওয়ালটন এর ভালো মনে হল।

সিকিউরিটি

ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলকিং স্পিড ওয়ালটন এর তুলনায় আইটেল এর একটু ফাস্ট মনে হল। দুটো ফোনেই ক্যামেরা ফেস আনলক ফিচার পাওয়া যাবে। আর দুটো ডিভাইসেই প্রাইমারি সিকিউরিটি হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর তো থাকছেই।

রিয়ার ক্যামেরা

ওয়ালটন এর রিয়ার প্যানেলে থাকছে একটি সিঙ্গেল ক্যামেরা মডিউল এবং আইটেল এর রিয়ার প্যানেলে থাকছে একটি ট্রিপল ক্যামেরা মডিউল। এর ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপে থাকছে ৮, ৫ এবং ০.৮ মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা সেন্সর। একটি প্রাইমারি রিয়ার শুটার এবং আরেকটি ডেপটথ সেন্সিং এর জন্য হলেও, বাকি থাকছে ০.৮ মেগাপিক্সেল আদৌ কোন কাজে আসছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। ওয়ালটনের রিয়ার প্যানেলে পাওয়া যাবে ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এখানে দুটো ক্যামেরার কালার সাইন্স একদম ভিন্ন রকম। ওয়ালটন দিয়ে আপনি ন্যাচারাল কালারের খুব ভাল ছবি নিতে পারবেন, অন্যদিকে আইটেলে আপনি পাবেন একটি ওয়ার্ম কালার টোন। তবে ডে লাইট এবং লো লাইটে আইটেল এর তুলনায় ওয়ালটনে একটু ভালো ডিটেলস এবং কম নয়েস লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্পেসাল ফিচার হিসেবে আইটেলে একটি পোট্রেইট মোড দেখা যাবে। তো ক্যামেরায় আমি ওয়ালটন এর ১৩ মেগাপিক্সেল সিঙ্গেল রিয়ার শুটারকে এগিয়ে রাখব।

ফ্রন্ট ক্যামেরা

তবে ফ্রন্ট ক্যামেরার দিক দিয়ে আমার কাছে আইটেল এগিয়ে থাকবে, কেননা আইটেলের ফ্রন্ট প্যানেলে আমরা দেখাতে পাবো ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, অন্যদিকে ওয়ালটনে থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। তাই ওয়ালটনের চাইতে আইটেলে একটু বেশি ডিটেইলস পাওয়া যাবে।

হার্ডওয়্যার

দুটো ডিভাইসএই একই অক্টাকোর চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে, এবং দুটোই ১.৬ গিগাহার্জ বাজ স্পিড সম্পন্ন। দুটোতেই পাওয়ার ভিআর রগ জিই৮৩২২ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ওয়ালটনে পাওয়া যাবে ৩ জিবি র‍্যাম এবং আইটেলে পাওয়া যাবে ২ জিবি র‍্যাম।

আর র‍্যাম এর কারনে ওয়ালটনে মাল্টিটাস্কিং এবং গেমিং এর দিক দিয়ে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে, ল্যাগ কম হবে। হালের জনপ্রিয় পাবজি গেম ওয়ালটনে সুন্দর ভাবে খেলা গেলেও, আইটেলে তা ল্যাগ হচ্ছিল, যা গেমিং প্রেমিদের জন্য ভাল নাও হতে পারে। তাছাড়াও অ্যাপ ওপেনিং স্পীডও ওয়ালটনের তাড়াতাড়ি।

ইউআই

দুটো ডিভাইসএই আপনি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাবেন কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস এর সাথে। যেখানে আপনি কাস্টমাইজেশন এর জন্য অনেক বেশি ফাংশন পাবেন।

ব্যাটারি এর দিক দিয়েও আইটেল এর চেয়ে আমার কাছে ওয়ালটন ভালো মনে হয়েছে, কেননা ওয়ালটনে পাওয়া যাবে ৩৫২০ এমএএইচ এর ব্যাটারি আর আইটেলে পাওয়া যাবে ৩০০০ এমএএইচ ব্যাটারি। তো এই বাজেট রেঞ্জে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফোনের সাজেশন এর ক্ষেত্রে আমি ওয়ালটনকেই প্রিফার করব, যেখানে আপনি গেমিং থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফি সকল বিষয়েই একটু স্মুথ পারফর্মেন্স পাবেন। এই ছিল স্মার্টফোন দুইটির ভেতর আলোচনা, আপনার মতামত জানাতে পারেন নিচে টিউমেন্টে, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *