আমি যতটা না লেখালেখি করি,তার চাইতে কয়েক গুণ বেশি পড়াশুনা করি

আহা, কতো ইচ্ছে ছিল আশপাশের মানুষজনের সাথে ইতিহাস, সমাজ এবং আমাদের চিন্তাধারা কি করে এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে এইসব নিয়ে আলোচনা করবো। তর্ক-বিতর্ক করবো।আমি যতটা না লেখালেখি করি, তার চাইতে কয়েক গুণ বেশি পড়াশুনা করি। আমার ধারণা সব লেখকদের ক্ষেত্রে’ই সেটা প্রযোজ্য।এই যেমন আজ সকাল আট’টায় পড়ার টেবিলে বসেছি, এখন বাজে প্রায় রাত আটটা।এক নাগাড়ে পড়াশুনা করেছি এতক্ষণ। মাঝে কেবল দুপুরে আধ ঘণ্টার জন্য বাইরে গিয়েছি রেস্টুরেন্টে খাবার জন্য।নিজ ইচ্ছেতেই সমাজ বিজ্ঞান পড়েছি। নিজেকে জানার জন্য। সমাজকে বুঝার জন্য।

আমি কখনো আমার লেখায় জটিল তাত্ত্বিক কিংবা পদ্ধতিগত বিষয় গুলো নিয়ে আসি না। কারন আমি জানি- খুব সাধারণ মানুষজন আমার লেখা পড়ে। তাই সব সময় চেষ্টা করি সহজ সরল ভাবে লেখার।কিন্তু ইচ্ছে তো হয় বাস্তব জীবনে তাত্ত্বিক বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করার। তর্ক-বিতর্ক করার।খুব ইচ্ছে হয় কলোনিয়ালিজম নিয়ে আলোচনা করি।

কারা আমাদের শেখালো সাদা চামড়া কিংবা নীল চোখ মানে সুন্দর?কারা আমাদের শেখালো কালো মানে নোংরা?কারা আমাদের শেখালো কালো চামড়ার মানুষ কষ্ট বেশি সহ্য করতে পারে? তাই তাদেরকে কম ঔষধ দিলেও চলবে?

ফ্রান্সিস ভদ্রলোক, তাই না?এই ধারণা সে কই থেকে পেল?

সমাজে কিছু মানুষ আছে যাদের গুণাবলী ভালো আবার কারো গুণাবলী খারাপ!

কারা আমাদের শেখাল কোট-প্যান্ট, টাই পড়ে থাকতে হবে, যখন কিনা বাইরে ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা? আমাদের তো টি-শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা?এইতো সেদিন এক ছেলে বলছিল- সাদা মানুষরা যেটা মনে করে সেটাই নাকি সভ্যতা!এই মানসিকতা এই ছেলের মাথায় কে ঢুকিয়ে দিয়েছে?এর জন্য শুধু কলোনিয়ালিজম না, বুঝতে হবে ওরিয়েন্টালিজমও।

এডওয়ার্ড সাইদ তো সেই ৭০ এর দশকেই লিখে গিয়েছে কিভাবে আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানরা এশিয়ান কিংবা মধ্য প্রাচ্যের মানুষদের দেখে।যা কিছু ভালো, যা কিছু সুন্দর; এর সব কিছু হচ্ছে ইউরোপ- আমেরিকা কেন্দ্রিক।এশিয়া আর মধ্য প্রাচ্যে থাকে কিছু বারবারিক মানুষ!আপনি আলাদিন দেখেন কিংবা ইন্ডিয়ানা জোন্স দেখেন।

কতো চমৎকার ভাবে পুরো পৃথিবীর মানুষের মানসিকতায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে- এইসব জায়গায় কিছু অসভ্য মানুষ থাকে। এরা এক্সটিক, এরা মন্সটার; এরা অসভ্য।পশ্চিমারা তাই কলোনির মাধ্যমে এদের সভ্য করার চেষ্টা করেছে!বাহ, কি চমৎকার সব আইডিয়া।

এইসব মডার্ন, কলোনিয়াল আইডিয়া; যারা কিনা অব্জেকটিভিটিতে বিশ্বাস করে। যেখানে “সত্য” সব সব সময় উদঘাটন করা যায়। এবং সেটাকে জেনারেলাইজও করা যায়!এই যেমন পশ্চিমারা হচ্ছে সুন্দর, সভ্য। ওরা যা করবে, সেটাই ভালো!এই ধারণা থেকে এরা এখনও আফগানিস্তানে যায়, ইরাকে যায়; তাদেরকে সভ্য করতে!এই ধারণা তো ভাঙতে হবে। এর জন্যও আছে ডি-কলোনিয়াল থিঙ্কিং কিংবা সাব্জেকটিভিটি।জগতের যে সব ধ্যান-ধারণা ইতিহাস থেকে আপনি পেয়েছে- এর সব সব কি আদৌ সত্য?

প্রশ্ন করতে হবে- ইতিহাসে কোন বিষয় গুলো মিসিং?

-কারা আমাদের ইতিহাস শেখাচ্ছে?

-কারা একটা শ্রেণীর মানুষকে ডিহিউম্যানইজ করে নিজদের সুপেরিওর ভাবছে?

কেন আমরা প্রশ্ন করতে পারি না?কারন বছরের পর বছর আমাদের শেখানো হয়েছে- কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ!

-কারা শিখিয়েছে?
-কেন শিখিয়েছে?

নিজদের সভ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে; আমাদের মতো মানুষদের ডি-হিউম্যানাইজ করার জন্য।এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো?কার সাথে করবো?

আমার আশপাশে তো আমি সেই সাদা চামড়ার তথাকথিত “সভ্য” মানুষদেরই দেখি; যারা আমার সাথে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অন্তত উৎসাহ দেখায়।

আর বাংলাদেশি কিংবা আমার মতো মানুষজন?

আমাদের কাছে এইসব আলোচনা মানে আতলামি ছাড়া কিছুই নয়। অন্তত যেখানে আমি থাকি, নিশ্চিত করে বলতে পারি- এই আলোচনা করার মতো একজন মানুষও নেই।

কারন কি জানেন?ওই যে কলোনিয়ালিজম!

আমরা তো বেঁচে থাকার তাগিদে, আর গাড়ি-বাড়ি; টাকা রোজগার করার তাগিদে যে যার মতো ছুটছি!সেটাতেও সমস্যা নেই। এইসব কিছুরও দরকার আছে।

কিন্তু তাই বলে মেধার চর্চা করা যাবে না? জ্ঞান চর্চা করা যাবে না?

সেটাতেও আমার আপত্তি নেই। সবার পক্ষে মেধার চর্চা কিংবা জ্ঞান চর্চা সম্ভব নয়।

কিন্তু যারা করে; তাদের নিয়ে হাসাহাসি কিংবা উপহাস করতে হবে কেন?

এই জন্যই ইতিহাস “তারা”, লিখেছে; “আমরা” নই!

এই যে আমার এই লেখাটা; এই লেখা কি আপনারা শেষ পর্যন্ত পড়েছেন?

যদি পড়ে থাকেন; আদৌ কি আপনাদের এই লেখা ভালো লেগেছে?

প্রশ্ন করুন। নিজেরাই উত্তর পাবেন।

না, ভালো লাগেনি। কারন এই লেখায় কোন “এক্সটিক” কিছু নেই। নেই কোন “মন্সটার” কিংবা “সেনসুয়াল” কিছু! আছে স্রেফ জ্ঞান চর্চার আগ্রহ।লেখাঃ আমিনুল ইসলাম স্যার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Trying to access array offset on null in /home/bcsaid/instabangla.com/wp-content/themes/disto/single.php on line 260