করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাবস্থা স্তব্দ।করোনা ভাইরাস (COVID-19) থেকে বাঁচতে সবাই গৃহবন্দি জীবন যাপন করছেন।কাটাচ্ছেন অলস সময়।আর অলসতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।তাই এই সময়ে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা বিশেষ প্রয়োজন।করোনা ভাইরাসের কারনে পুরো দেশ লক ডাউন থাকলেও আমাদের শরীর কিন্তু লক ডাউন করে রাখা যাবে না।করোনা ভাইরাস (COVID-19) থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদের শরীরকেই ঢাল হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: শুধু করোনা ভাইরাস নয় যেকোনো ধরনের জিবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) অনেক বেশী থাকা প্রয়োজন। ব্রিটিশ সোসাইটি ফর ইমিউনোলজির অধ্যাপক আর্নে আকবর বলেন, আপনি যদি শারীরিক ভাবে ফিট থাকেন তাহলেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।মানুষের শরীরের রক্ষন প্রাচির বলা হয়ে থাকে তার শরীরের রক্তের শ্বেত কনিকাকে।আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাহলে ব্যায়াম করার কারনে যখন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় তখন তা রক্তের শ্বেত কনিকাকে সক্রিয় করে তুলে।আর এই সক্রিয় শ্বেত কনকা আপনার শরীরের ভেতর ঢুকে পড়া জিবানুকে খুঁজে বের করে।বিশেষ করে, যাঁদের ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, গেঁটে বাত রয়েছে,তাদের করোনা ভাইরাস (COVID-19) এ আক্রান্ত হবার সম্ভবনা খুবই বেশী।কারন এসব রগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।তাই যারা এসব রোগে আক্রান্ত তাদের সকালে ব্যায়াম করা উচিত।আর এমনিতেও ৬৫ বছর বয়স এর পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।ফলে নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তৈরি করুন খরচ ছাড়া জিমঃ নিজ বাড়িতে নিয়মিত ব্যায়াম করছেন মেসি,বিরাট কোহালি সহ আরও অনেক চেনা তারকারা।আপনি হয়ত ভাবছেন তাদের ব্যায়াম করার সরঞ্জাম রয়েছে তাই তাদের পক্ষে ব্যায়াম করা খুবই সহজ।আসলেও ব্যাপারটা তেমন নয়!যদি সত্যি বলি তাহলে বলতে হবে ব্যায়াম করার জন্য আসলেও কোন সরঞ্জাম এর প্রয়োজন পরেনা।আপনি ডাম্বেলের পরিবর্তে ব্যাবহার করতে পারেন এক অথবা দুই লিটার জলের বোতল।আর রাস্তা বা পার্ক এর পরিবর্তে আপনার ঘরকেই ব্যায়ামাগার হিসাবে ব্যাবহার করতে পারেন।
সহজ ব্যায়াম করাঃ যে ব্যায়ামগুলো আদতে সহজ সেই ব্যায়ামগুলো এখন করা যেতে পারে।নিচে কিছু ব্যায়াম এর কথা বর্ণনা করা হল,যে ব্যায়াম গুলো করলে যেকোনো বয়সের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- ব্রিজ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতি হল দুই হাঁটু ভাজ করে কোমর থেকে এক ফুট দূরে রাখতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে আপনার হাত যেন মাটিতেই থাকে।আর এই অবস্থায় আপনার কোমরকে শূন্যে তুলতে হবে।এবার মনে মনে ৫০ পর্যন্ত গননা করুন।এখন এই ব্যায়াম কে আপনার কাছে সহজ মনে হলে এক পা শূন্যে তুলে আপনার কোমরকে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন।
- বোতল-বদল পদ্ধতিঃ আপনি যে ঘরে ব্যায়াম করবেন সেই ঘরে ছয়টি দুই লিটার এর জল ভর্তি বোতল ঘরের এক কোনায় রাখুন।ব্রিজ ব্যায়াম এর পরে ছয়টি জলের বোতল থেকে দুটি বোতল ঘরের অন্য কোনায় রাখুন,এবং বাকি চারটা জলের বোতল থেকে আরও দুইটি বোতল ঘরের আরেক কোনায় রাখুন।এবার বোতল গুলো আবার পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনুন।এই ভাবে একই পক্রিয়া তিন-চার বার করুন।এখন দুই-তিন মিনিট বিশ্রাম নিন।বিশ্রামের পর সম্ভব হলে আরও কয়েকবার এই পক্রিয়ায় ব্যায়ামটি চালিয়ে যান।এই ধরনের ব্যায়াম স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যা রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ওয়াইপার পদ্ধতিঃ গাড়ির সামনের কাঁচের জল সরানোর জন্য ওয়াইপার এর ব্যাবহার দেখেছেন নিশ্চয়?এই ব্যায়ামটা অনেকটা সেই ধরনের।এবার হাতে একটা বালিশ নিয়ে আপনার দুই পায়ের মাঝখানে জোরে চেপে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে।এখন গাড়ির ওয়াইপার যেমন একদিক থেকে আর এক দিকে যায় সেভাবে কোমরকে উপরে তুলে ডান থেকে বামে ঘুরাতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে এই সময় আপনার কোমর যেন শূন্যেই থাকে।দুই দিক মিলিয়ে এই ব্যায়াম ২০-২৫ বার করে উঠে পড়ুন।
- ওজন নিয়ে হাঁটা এবং ওজন ছাড়া হাঁটা পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে ব্যায়াম করার জন্য,দুই হাতে এক লিটার এর জল ভর্তি বোতল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে।এখন ঠিক আপনি যেভাবে হাঁটেন সেই ভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটতে হবে।এবং একই সাথে হাতের জল ভর্তি বোতল ও দোলাতে হবে।মনে মনে ৪০ পর্যন্ত গননা করবেন।হাঁটার প্রথম অংশটা কঠিন হলেও দ্বিতীয় অংশটা সহজ।বোতল নিয়ে হাঁটা শেষ হলে ১-২ মিনিট বিশ্রাম নিন।বিশ্রাম শেষ হলে এবার বোতল ছাড়া খালি হাতে একই ভাবে হাঁটা শুরু করুন। ব্যায়াম শেষ হলে জোরে জোরে শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে হবে।এতে করে আপনার ফুস্ফুসে বেশী অক্সিজেন প্রবেশ করবে এবং আপনার শরীরকে তরতাজা মনে হবে।
Leave a Reply