হাসতে আমরা সবাই ভালোবাসি – কিন্তু কেনো আমরা হাসি,কি জন্যে আমরা হাসার প্রয়োজন?

হাসি হচ্ছে একপ্রকার মুখমণ্ডলীয় বহিঃপ্রকাশ, যা সচরাচরভাবে মুখের নমনীয় পেশীকে দু’পাশে প্রসারিত করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। মুখমণ্ডল ছাড়াও চোখের মধ্যেও হাসির বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠতে পারে। মানুষের হাসি আনন্দ, সুখ, বা মজা পাওয়ার উপলক্ষ হিসেবে হাসির চল আছে। কিছু ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও হাসির ব্যবহার দেখা যায়, যা প্রচলিতভাবে মুখবিকৃতি বা ভেংচি কাটা হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও রাগ, ভয় এবং কিছুক্ষেত্রে কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও হাসি দেখা যেতে পারে। আন্তঃসাংস্কৃতিক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে হাসি যোগাযোগের একটি অন্যতম হাতিয়ার ও মাধ্যম।সুখ প্রকাশকেই হাসির সবচেয়ে বহুল ব্যবহার হিসেবে স্বীকৃত ও বিবেচনা করা হয়। প্রাণীদের মধ্যে দাঁত প্রদর্শন করাকে হাসির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও প্রায় সময়ই তা হুমকি বা সতর্ক করা হচ্ছে—এমন অর্থ বহন করে। শিম্পাঞ্জীদের মাঝে ভয়ের প্রতীক হিসেবেও হাসি দেখা যায়।

হ্যা, আজকে আমরা সেটাই আবিষ্কার করবো। তো চলুন স্টেপ বাই স্টেপ জেনে আসা যাক।

কিভাবে হাসি আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

প্রতিবার আমরা যখন হাসি, তখন আমাদের ফেসিয়াল মাসল যা হাসি প্রকাশের জন্য দায়ী সেটি মস্তিষ্কে ভালো-অনূভুতি প্রেরণ করে। হাসির এই কাজটি আপনার নিউরাল মেসেজিং যে (Neural Messaging) সক্রিয় করে তোলে। ফলে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকে এবং ভালো লাগা অনূভুতি কাজ করে।

হাসার সময় বা ফেসিয়াল মাসলে টান পড়ার সময়,মস্তিষ্ক সে সিগনাল গ্রহন করে।এর ফলে মস্তিষ্ক নিউরোপেপটাইড ক্ষরণ শুরু করেদেয়(নিউরোপেপটাইড হলো সোজা ভাষায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনু যারা নিউরনগুলির পারস্পরিক যোগাযোগের পথ সহজ করে দেয়)।আমাদের যেকোনো ভাব প্রকাশে যেমনঃরাগ,দুঃখ,ভালোবাসা,হতাশা প্রকাশে এই নিউরোপেপ্টাইডের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যখন হাসেন, তখন ফেসিয়াল মাসলে থাকা নিউরো ট্রান্সমিটারগুলো ভালো লাগা অনূভুতিটি মস্তিষ্কে প্রবাহিত করে। এবং মস্তিষ্ক ও প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শরীরের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ডোপামিন হরমোন, এন্ডারোফিন্স এবং সেরাটোনিন হরমোন নিসৃঃত করে। এই হরমোনগুলো আপনার দেহকে শুধু শিথিলই করেনা, আপনার হার্টবীটরেট ও ব্লাডপ্রেসারকেও স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।

হাসির জন্য দায়ী এই এন্ডারোফিন্স(Endorphins) হরমোন প্রাকৃতিক ব্যাথানাশক হিসেবে ও কাজ করে।হাসির অনুভুতি হল,যেটা আপনার শরীর মন ভালো রাখে।যেটা আপনার হার্টবীটরেট ও ব্লাডপ্রেসারকেও স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।তাইতো ডাক্তাররা বলেন,বিভিন্ন পরিস্থিতিতে হাসিখুশি থাকতে। এর ফলে আপনার মানসিক ও শারীরিক বেদনা কমে যায়।বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা হাসিখুশি মুখভঙ্গিটি অধিকসংখ্যকবার পছন্দ করেছেন। এর থেকেই বুঝা যায় হাসিখুশি থাকা আমাদের দেহের উপর কেমন প্রভাব ফেলে।

হাসির ফলে নিসৃঃত অন্য একটি হরমোন সেরাটনিন(Serotonin) মূলত অ্যান্টি-ডিপ্রেসেড মেডিসিন বা মুড লিফটার (Mood-Lifter) হিসেবে কাজ করে। এই সেরোটোনিন এর প্রভাবে আপনার ব্রেইন নিজেকে রিলাক্সড ভাবতে শুরু করে।অ্যান্টি-ডিপ্রেসেডের যে সকল ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রত্যেকটির কাজ মূলত মস্তিষ্কে সের হরমোন নিঃসরণের হারকে ত্বরাহ্নিত করা। তাই শুধু ডাক্তার কিংবা গাদাগাদা ওষুধপত্র না কিনে হাসতে শুখুন।

হাসি কিভাবে আমাদের দেহে প্রভাব ফেলে?

হাসি, সৃষ্টিকর্তার দেওয়া মানুষের জন্য এক বিশেষ উপহারস্বরূপ।সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো,পৃথিবীর কোনো প্রানীই হাসতে পারেন একমাত্র মানুষ ছাড়া।আপনি যখন হাসবেন,তখন শরীর সব পেশী সবল হয় এবং শরীর সুস্হ থাকে।

হাসিখুশি থাকা একটি সংক্রামক আচরন।আপনি যখন কাউকে হাসিখুশি দেখবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেউ সেই ব্যাক্তিকে আপনার ভালো লাগবে, আকর্ষনীয় লাগবে।এবং তাকে দেখে আপনার নিজের অজান্তেই হাসি পেয়ে যাবে,আপনি রিলাক্সড ফিল করবেন।

নিউরোপসাইকোলিয়া জার্নালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,আপনি যখন কোনো আকর্ষণীয়, হাস্যময় কোনো চেহারা দেখেন, তখন আপনার অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্স(চোখে দেখার জন্য নিয়োজিত স্নায়ু) মস্তিষ্ক রিলাক্সড অনূভুতি পাঠায় এবং সে অনুযায়ী মস্তিষ্ক হরমোন নিঃসরন করে (সে ব্যাপারে বিস্তারিত আরেকদিন আলোচনা করা যাবে)।

আবার ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড এ অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেস রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকদের তথ্যমতে _কিছু পুরুষ ও নারীকে ড্যাশবোর্ড থেকে একই ব্যাক্তির হাসিখুশির ছবি ও অন্যদিকে সাধারন মুখভঙ্গি বিষিস্ট ছবি রাখা হয়। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা হাসিখুশি মুখভঙ্গিটি অধিকসংখ্যকবার পছন্দ করেছেন। এর থেকেই বুঝা যায় হাসিখুশি থাকা আমাদের দেহের উপর কেমন প্রভাব ফেলে।

কিভাবে হাসিখুশি কোনো ব্যাক্তির চারপাশের পরিবেশকে প্রভাবিত করে?

আগেই বলেছি হাসি একটি সংক্রামক আচরন। যখন আপনি হাসবেন, তখন আপনার পাশে থাকা লোকটিও বিনা কারনে হাসতে থাকবেন বা হাসার চেস্টা করবেন।অ্যান্টি-ডিপ্রেসেডের যে সকল ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রত্যেকটির কাজ মূলত মস্তিষ্কে সের হরমোন নিঃসরণের হারকে ত্বরাহ্নিত করা। তাই শুধু ডাক্তার কিংবা গাদাগাদা ওষুধপত্র না কিনে হাসতে শিখুন।পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঔষধ হল হাসি।যত হাসবেন তত অসুখ থেকে দুরে থাকবেন আর ডিপ্রেশন থেকে দুরে থাকবেন।

একটি সুইডিশ স্টাডির ফল এমন আসে যে, কিছু মানুষকে একই ব্যাক্তি জয়,রাগ,ভয়,আশ্চর্যের মুখভঙ্গির ছবি দেখানো হয়। প্রায় ৯৫% মানুষ হাসির মুখভঙ্গি ছবিটি পছন্দ করেন। যার ফলে সিধান্ত এ আসা যায়, হাসিখুশি থাকার উপরেও নির্ভর করছে আশেপাশের মানুষ আপনাকে কেমন ভাবছে।একজন মানুষের আশে পাশের পরিবেশ পরিস্হিতি সব নির্ভর করে তার হাসার উপর।তো এই ছিলো হাসির বৈজ্ঞানিক ও মনঃস্থাতিক কারন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Trying to access array offset on null in /home/bcsaid/instabangla.com/wp-content/themes/disto/single.php on line 260