যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হল ফরাসি বিমান প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এর A-380।এর দৈর্ঘ্য ৭৩ মিটার, এবং উইংস্প্যান (অর্থাৎ এক পাখা হতে আরেক পাখার দূরত্ব) ৭৯.৭৫ মিটার।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান আসলে দুই ক্যাটাগরিতে বলা যায়ঃ-
১) যাত্রীবাহী
২) মালবাহী।
মূলত বড় বিমানের ক্ষেত্রে আরেক বিমান প্রস্ততকারক জায়ান্ট বোয়িং এর সাথে টক্কর দিতে ১৯৮৮ সাল থেকে এয়ারবাস বেশ আঁটঘাট বেঁধে নামে এবং ১৯৯৪ সাল থেকে A-3XX প্রোজেক্ট গ্রহণ করে।অবশেষে ২০০০ সালে এয়ারবাস একটি ডাবল ডেক (দোতলা বলতে পারেন), প্রশস্ত বিমান তৈরীর জন্য প্রায় ১১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ‘A-380‘ প্রকল্প হাতে নেয়। মোটামুটি ৫ বছরের মাথায় এয়ারবাস A-380 তার প্রথম ফ্লাইটটি সম্পন্ন করে।
সাধারণত ডাবল ডেক বিমানগুলোতে ৫২৫ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা থাকলেও এয়ারবাস A-380 ৮৫৩ জন পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়তে সক্ষম! এর চার চারটি রোলস রয়েস ট্রেন্ট ৯০০ টার্বোফ্যান এর সাহায্যে এটি একবারে ১৪৮০০ কি.মি. দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে। তবে উচ্চ চালনা খরচ, উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ খরচের জন্য অনেক এয়ারলাইন্সই এখন A-380 এর বদলে A-350 বা A-330 এর প্রতি বেশী আগ্রহী হচ্ছে।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা যাত্রীবাহী বিমান হল বোয়িং 747–8I.A-380 এর চেয়ে 747–8I লম্বায় প্রায় ৩.২৪ মিটার বেশী হলেও A-380 এর উইং স্প্যান বোয়িং 747–8I এর চেয়ে প্রায় ১০ মিটার বেশী।
মালবাহী বা কার্গো বিমান হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মালবাহী বা কার্গো বিমান Antonov An-225 Mriya. এর দৈর্ঘ্য ৮৪ মিটার, এবং উইংস্প্যান ৮৮.৪ মিটার। এটি আসলে মানুষের তৈরী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমান।এই ৬ ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি দানবাকৃতির উড়োজাহাজটি প্রায় ৬৪০ টন ভর নিয়ে উড়তে পারে।ইউক্রেনের বিমান প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান আন্তোনভ ডিজাইন ব্যুরো মূলত রাশিয়ান স্পেস শাটল ‘বুরান’ কে বহন করার জন্য এই বিশালাকার বিমানটি তৈরী করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীতে এই Antonov An-225 Mriya বিমান একটিই আছে এবং ১৯৮৮ সাল থেকে এই বিমানটি বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ প্রথমবারের মতো আকাশে উড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্ণিয়ার মোহাভি মরুভূমি থেকে।স্ট্রাটোলঞ্চের ‘রক’ নামের বিমানটি ডানার দৈর্ঘ্যের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ।
মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত পল অ্যালেনের কোম্পানি স্ট্রাটোলঞ্চ এই উড়োজাহাজটি তৈরি করেছে। সাদা এই উড়োজাহাজটির দুই ডানার দৈর্ঘ্য একটি আমেরিকান ফুটবল মাঠের সমান। দুই ফিউজেলাজের বিমানটি চলে ছয়টি ইঞ্জিনের শক্তিতে। এটির নাম রাখা হয়েছে ‘রক’।এটি মোহাভি মরুভূমির একটি বিমান ঘাঁটি থেকে আকাশে উড়ে। দু ঘন্টার ফ্লাইট শেষে এটি আবার বিমান ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
এই উড়োজাহাজটি তৈরি করা হয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের জন্য। এখন স্যাটেলাইট বসানো হয় রকেট দিয়ে উৎক্ষেপনের মাধ্যমে। কিন্তু স্ট্রাটোলঞ্চের পরিকল্পনা হচ্ছে, এই বিশাল উড়োজাহাজে করে স্যাটেলাইটকে প্রায় দশ কিলোমিটার উঁচুতে তুলে তারপর পৃথিবীর কক্ষপথে ছেড়ে দেয়া হবে। এর ফলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের খরচ অনেক কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে উড়োজাহাজটির গতি ছিল ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৮৯ মাইল এবং এটি ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছায়।
Leave a Reply