সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড-পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ!

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ সিল্যান্ড!বিস্তীর্ণ নীল সমুদ্র। তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্লাটফর্ম। নাম তার সিল্যান্ড।তাদের দাবি অনুসারে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ। তো চলুন আজকে জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ সিল্যান্ড সম্পর্কে।

শূন্য দশমিক ০২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির বাসিন্দা মাত্র ৫০ জন (২০১৩ সালের পরিসংখ্যান)। দেশটির নিজস্ব পতাকা, পাসপোর্ট, মুদ্রা সবই আছে।

উত্তর মহাসাগরে ব্রিটেনের জলসীমায় সাফোক (Suffolk) উপকূলে অবস্থিত পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম এই দেশের নাম প্রিন্সিপ্যালিটি অব সিল্যান্ড।। দেশের রাজধানীও আছে। রাজধানীর নাম এইচএম ফোর্ট রাফস। মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার। রাষ্ট্রীয় ওয়েব ঠিকানা- Principality of Sealand – Become A Lord Or Lady With Sealand

আসলে দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি সমুদ্র বন্দর। জার্মান সেনারা যেকোনও সময় ইংল্যান্ড আক্রমণ করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই ব্রিটিশ সেনা ইংল্যান্ড উপকূলে দূর্গ বানানোর পরিকল্পনা করে। এরই একটি পরিত্যক্ত বন্দর হচ্ছে সিল্যান্ড।

প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড’ সংক্ষেপে সিল্যান্ডের অবস্থান ব্রিটিশ সমুদ্র উপকূল থেকে ছয় মাইল দূরে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে টিকে আছে এই সিল্যান্ড। এটি আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন কর্তৃক স্থাপিত একটি সামুদ্রিক দুর্গ। প্রথমদিকে একে ডাকা হতো ‘রাফস টাওয়ার’ নামে। এর কাজ ছিল শত্রু বিমানকে প্রতিহত করা, ইংল্যান্ডের জলসীমায় জার্মান মাইন বসানো পর্যবেক্ষণ করা ও তা সম্পর্কে রিপোর্ট করা। যুদ্ধের সময় এটি ছিল প্রায় ১৫০-৩০০ জন সৈন্যের আবাসস্থান। সেই সাথে এখানে ছিল বিভিন্ন রাডারের যন্ত্রপাতি, দুটি ৬ ইঞ্চি বন্দুক, এবং দুটি ৪০ মি.মি. অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট অটোমেটিক কামান। ১৯৫৬ সালে রয়াল নেভি একে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

পৃথিবীর কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্র এখনও সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি না দিলেও বিরোধিতাও করেনি। তবে বেইটসের দাবি, এটা যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বন্দর সেহেতু ব্রিটেন ও জার্মানি কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছে।১৯৬৭ সালে সামরিক বন্দরটি দখল করেন প্যাডি রয় বেইটস এবং এ স্থানকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। মূলত স্থানটি জলদস্যুদের বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বেইটস তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রটি কেড়ে নেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সেখানে নিজস্ব স্টেশন স্থাপন করা।

১৯৭৫ সালে তিনি সিল্যান্ডকে একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। তখন তিনি একটি শাসনতন্ত্র এবং একটি রাষ্ট্রের অন্যসব প্রতীকও প্রণয়ন করেন।বয়োবৃদ্ধকালে বেইটস মূল ভূখণ্ড এসেক্সে ফিরে যান এবং ছেলে মাইকেলকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন। তিনি মারা যান ২০১২ সালের অক্টোবরে ৯১ বছর বয়সে। এর পর থেকে বেইটসের প্রতিনিধি তার ছেলে ওই দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমানে পৃথিবীর কোনো দেশ সিল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব ও বৈধতার স্বীকৃতি না দিলেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। মাত্র ৫৫০ বর্গ মিটারের এই রাষ্ট্রটি বর্তমানে পর্যটন ও বিভিন্ন মিউজিক ভিডিও ধারণের স্থানে পরিণত হয়েছে। গোটা সিল্যান্ডে রয়েছে একটি মাত্র ভবন ও একটি হেলিপ্যাড। বর্তমান কর্তৃপক্ষের দাবী অনুসারে, ২৭ জন মানুষ এখানে বাস করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে, এখানে মাত্র ৪ জন স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ইন্টারনেটে সিল্যান্ডের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে সিল্যান্ডের নানা স্মারক, ডাকটিকিট, মুদ্রা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে সিল্যান্ডের লর্ড, ব্যারন, কাউন্ট প্রভৃতি পদবী কিনতে পারবেন। সেই সাথে সিল্যান্ডের পাসপোর্ট করে চাইলে ঘুরেও আসতে পারবেন দেশটি থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *