আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার এর প্রান কি?একদম সহজ উত্তর হল প্রসেসর!কেননা আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোন সব কিছু থাকার পরেও যদি প্রসেসর না থাকে তাহলে আপনি সেইটা আর ব্যাবহার করতে পারবেন না।সুতরাং আমাদের সকলের এই যন্ত্রাংশের উপর একটু হলেও জানাশুনা থাকা উচিত।আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানবো প্রসেসর কি এবং এই প্রসেসর আমাদের কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোন কিবভাবে কাজ করে।
কম্পিউটার অথবা মোবাইলের প্রসেসর কে আমরা আমাদের মাথার সাথে তুলনা করতে পারি।আমাদের মাথা যেমন আমাদের দেহের অন্যান্য অঙ্গ সমূহকে পরিচালনা করে ঠিক তেমনি কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোনের প্রসেসর আমাদের মাথার মত কম্পিউটার এবং মোবাইলকে নিয়ন্ত্রন করে।কম্পিউটার অথবা মোবাইলের প্রসেসর নিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়া অথবা বিভিন্ন বইয়ে অনেক লিখা পাবেন তাই আমি সেই বইয়ের ভাষায় বা ইন্টারনেট দুনিয়ার ভাষায় নয়!সহজ ভাবে আপনার বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে আপনাকে বুঝানোর চেষ্টা করব প্রসেসর কি এবং এই প্রসেসর কীভাবে কাজ করে।
প্রসেসর কিঃ
প্রথমে আমরা জানবো প্রসেসর কি?আমরা অনেকেই বই পুস্তুকে পড়েছি সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট(সিপিইউ) কেই প্রসেসর বলা হয়।কম্পিউটার বলেন আর মোবাইল বলেন দুই’ই নিয়ন্তরন করে এই প্রসেসর।পৃথিবীর প্রথম প্রসেসর তৈরি করে ইন্টেল কোম্পানি এবং এটি ১৯৭১ সালে।৪০০৪ নামের এই প্রসেসর মূলত একটি মাইক্রো প্রসেসর ছিল।এই প্রসেসর গুলো সিলিকনের উপর হাজার হাজার ট্রানজিস্টার যুক্ত করে তৈরি করা হত।সময়ের সাথে সাথে প্রসেসরের অনেক উন্নতিসাধন করা হয়েছে।এবং বর্তমান সময়ের প্রসেসর গুলো অনেক দ্রুত ডাটা প্রসেস করতে সক্ষম।বর্তমান সময়ে যারা সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রসেসর তৈরি করছে এমন দুইটি কোম্পানির নাম হলঃ ইন্টেল এবং এএমডি।এবং মোবাইল ফোনের প্রসেসর তৈরির জন্য কোয়ালকম,মিডিয়াটেক বিখ্যাত।
এখন আমরা জানব প্রসেসর কীভাবে কাজ করেঃ
কম্পিউটার বা মোবাইল এর প্রসেসর কীভাবে কাজ করে এটা জানার আগে আমরা একটা বাস্তব উধাহরন দেখব।ক্রিকেট খেলার সময় যখন বোলার বল করে তখন ব্যাটসমানকে কয়েক সেকেন্ড এর ভেতর সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে সেই বলটি কীভাবে খেলবে।আর এই হিসাবটা কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর ভেতর নিয়ে ফেলে।
একই ভাবে আমাদের কম্পিউটার অথবা মোবাইলের প্রসেসর মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর ভেতর হিসাব করে আমাদের দেওয়া নির্দেশ এর আউটপুট আমাদের দিয়ে দেয়।আপনি যখন এই লেখা পরছেন তখন আপনার কম্পিউটার এর মাউস দিয়ে এই লিখা স্ক্রল করে নিচের দিকে যাচ্ছেন,তখন আপনি মাউস দিয়া নির্দেশ দিচ্ছেন যেন আপনাকে নিচের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।আর আপনার এই নির্দেশ মুহূর্তের ভেতর পালন করছে আমাদের এই প্রসেসর।আর এই নির্দেশ গুলো যায় শূনো এবং এক এর মাধ্যমে।এখানে ০ মানে বন্ধ এবং ১ মানে চালু।অর্থাৎ আপনি যখন ০ নির্দেশ দেন তখন প্রসেসর কাজ করা বন্ধ করে দেয় আবার যখন আপনি ১ নির্দেশ দেন তখন আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইল এর প্রসেসর কাজ করা শুরু করে।এবং এই ০ এবং ১ কে প্রতিটাকে ১ বিট হিসাবে ধরা হয়।
এখন প্রশ্ন হল কম্পিউটারে এই নির্দেশ আমরা আমাদের কী-বোর্ড অথবা মাউস এর মাধ্যমে দেই।এবং কিছু কিছু নির্দেশ আমরা বাক্যর মাধ্যমে দেই।যেমন আমরা যদি বলি যাও বাজার নিয়ে আস।আমাদের কম্পিউটার কিন্তু এটা বুঝতে পারে না,তার কাছে যাও বাজার নিয়ে আস এর রুপ হচ্ছে ১০০১০০১১।অর্থাৎ আমরা যা ই নির্দেশ করিনা কেন কম্পিউটার তা বুঝবে ০ এবং ১ দিয়ে।
প্রসেসরের কোর কি?
কম্পিউটার অথবা মোবাইল প্রসেসর এর কোর অনেক টা আমাদের হাতের মত।আমরা ২ টা হাত দিয়ে যে কাজ করি,আমাদের হাতের সংখা যদি বাড়ানো হয় তাহলে আমারা আরও দ্রুত কাজ করতে পারব।যদিও মানুষের হাতের সংখা কোনদিন বাড়ানো সম্ভব না,এখানে সুধু মাত্র বুঝানোর সুবিধার জন্য রূপক অর্থে “হাত” শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে।একই ভাবে যদি প্রসেসর এর কোর বা হাত বাড়ানো হয় তাহলে আমাদের সেই প্রসেসর আরও বেশী গতি সম্পন্ন হবে।আর গতি বেশী হলে যেকোনো নির্দেশ আরও দ্রুত কমপ্লিট করতে পারবে।প্রসেসরে সাধারানত ৫ ধরনের কোর লক্ষ করা যায়।যেমনঃ ডুয়েল কোর – ২ টি কোর,কোয়াড কোর – ৪টি কোর,হেক্সা কোর – ৬টি কোর,অকটা কোর – ৮টি কোর এবং ডেকা কোর – ১০টি কোর।এখন এখানে প্রশ্ন হল কোর কম বা বেশী হলে সুবিধা বা অসুবিধা কি?যদি আপনার প্রসেসর এর কোর বেশী হয় তাহলে আপনি অনেক গুলো কাজ একসাথে করতে পারবেন আর যদি কোর কম হয় তাহলে একটি করতে গেলে আরেকটি বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসেসরের ক্লক স্পিড কি?
আপনি যদি কখনও প্রসেসর কিনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এর প্যাকেট এর গায়ে 2.3 GHz বা 3.4 GHz বা অন্য কোন লেখা দেখেছেন নিশ্চয়?আর এই লেখাটায় হল আপনার প্রসেসরের ক্লক স্পিড।এই লেখা দ্বারা বুঝানো হয় আপনার প্রসেসরটি প্রতি সেকেন্ডে কতবার হিসাব করতে পারে।এই ক্লক স্পিড যত বেশী হবে আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইল হবে তত দ্রুত গতি সম্পন্ন।
প্রসেসরের ক্যাশ মেমোরি কি?
আমরা যে কাজ গুলো আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে বার বার করি প্রসেসর এই কাজ গুলো আমাদের ক্যাশ মেমরিতে জমা রাখে।যার ফলে পরের বার আমরা যখন একই কাজ করতে যাই তখন সেই কাজ খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়।বাজারে প্রচলিত প্রসেসর গুলোর সাধারানত ৮ এমবি পর্যন্ত ক্যাশ মেমোরি হয়।
প্রসেসরের FBS কি?
কম্পিউটার অথবা মোবাইল প্রসেসরের সব তথ্য ক্যাশ মেমোরিতে থাকে না।বেশিরভাগ তথ্য তাঁকে RAM এ।আর কোন প্রসেসর কত দ্রুত RAM এর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে তা FBS দ্বারা বুঝানো হয়।কিন্তু আধুনিক প্রসেসরে FBS এর পরিবর্তে QPI ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
প্রসেসরের ৩২ বিট আর ৬৪ বিট কি?
উপরে আমরা জেনেছিলাম কম্পিউটার এ আমরা যা ই নির্দেশ দেই না কেন কম্পিউটার তা ০ এবং ১ দ্বারা বুঝে।এই পদ্ধতিকে বাইনারি বলা হয়।আর এই বাইনারি সংখ্যা কে কত বেশী হিসাব করতে পারে সেইটা নির্দেশ করে ৩২ এবং ৬৪ বিট।আর এই সংখ্যা বেশি হিসাব করতে পারে ৬৪ বিট।সুতরাং ৬৪ বিটের প্রসেসর হবে বেশী গতি সম্পন্ন।
Leave a Reply