মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব, মুঘল ইতিহাসের দাপুটে সুলতানদের একজন। ইতিহাসের পাতায় যিনি একই সাথে নিন্দিত এবং নন্দিত। তাঁর মৃত্যুর পর মুঘলরা ভারতবর্ষে পুরনো গৌরব হারাতে বসে। এরূপ টালমাটাল পরিস্থিতিতে পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে। ফলে মুঘল সাম্রাজ্য আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই সময়টায় মূলত দিল্লির দুর্বলতার কারণেই উত্থান ঘটে মারাঠাদের।
যুদ্ধবাজ মারাঠারা দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েমের পর, পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
এসময় স্থানীয় অনেক মুসলিম শাসকরাও মারাঠাদের মিত্রতা গ্রহণ করে। মারাঠাদের সাম্রাজ্যবাদী অভিযানে সাধারণ জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখনই ভারববর্ষে আগমণ ঘটে আফগান অধিপতি আহমেদ শাহ আবদালীর। যুদ্ধবাজ মারাঠাদের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী আবদালী চূড়ান্ত সংঘর্ষে জড়াবার পূর্বে মনোনিবেশ করেন ভারতের আঞ্চলিক শাসকদের সাথে মিত্রতা গড়ে তুলতে। কারণ তিনি ভালোভাবেই জানতেন অচেনা ভারতের মাটিতে মারাঠাদের পরাজিত করতে হলে প্রয়োজন স্থানীয় মিত্র। মারাঠারাও থেমে ছিল না। আবদালীকে যোগ্য প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে থাকে তারাও।
১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারী। পানিপথ প্রান্তর আবারও এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী হতে প্রস্তুত। এক দিকে আহমেদ শাহ আবদালীর সাথে রোহিলার নবাব নজিব-উদ-দৌলা, নবাব সুজা-উদ-দৌলা; অন্যদিকে মারাঠাদের সাথে রয়েছে ইব্রাহীম খান গার্দী ও জোটের অন্যান্যরা।যুদ্ধের শুরুতেই মারাঠা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে রোহিলা বাহিনী। তবে ঠিক একই সময়ে আবদালীর নেতৃত্বে থাকা আফগান সৈন্যদের আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় মারাঠা সেন্টার পয়েন্ট। যুদ্ধের এমন পর্যায়ে আসলে বলা মুশকিল ছিল যে, কারা বিজয়ী হবে।
কিন্তু আকস্মিক মারাঠা সেনাপতি হালকার রাও আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে ময়দান ছেড়ে পলায়ন করলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়।যদিও এসময় ইব্রামীম গার্দীর গোলান্দাজ বাহিনী প্রাণপণে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ আবদালীর সামনে টিকে থাকতে পারেনি মারাঠা জোট।ফালাফলে ভারতবর্ষের মাঠিতে আরও একবার বিজয়ী হয় মুসলিম বাহিনী। সেই সাথে মারাঠারাও এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে, পরবর্তী আর কখনোই এত বেশি শক্তিমত্তা নিয়ে হাজির হতে পারেনি।লিখেছেনঃ Rakib Tushar
Leave a Reply