“UK, Great Britain এবং England”- একদেশের তিন নাম” আসুন জানি এর ভৌগোলিক ও অন্যান্য পার্থক্য গুলো!

যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে)

প্রথমে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ছাড়াও আয়ারল্যান্ড নামক আরকটি ‘ভূখণ্ডের’ ধারণা দিয়ে রাখা দরকার। কারণ যুক্তরাজ্য, ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেনের জটলার মধ্যে আয়ারল্যান্ড নামটিও জড়িত।

আসলে আয়ারল্যান্ড নামে কোনো দেশ নেই। একটি দেশ আছে, নাম রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড। আরেকটি দেশের নাম নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। এরা পাশাপাশি অবস্থিত। এই লেখার শেষাংশে এই দুটি দেশ তথা ‘আয়ারল্যান্ড’ নিয়ে আরো বলা হয়েছে।

প্রথমেই যুক্তরাজ্যের জট খোলা যাক। অনেকেরই ধারণা, যুক্তরাজ্য একটি একক দেশ। আসলে যুক্তরাজ্য হচ্ছে ৪টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি দেশ (স্টেট)। চারটি সম-মর্যাদার জাতি: ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড মিলে যুক্তরাজ্য গঠিত। যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম পুরোটা একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড বলা যেতে পারে, তবে সীমারেখার ভিত্তিতে এই চারটি দেশকে আলাদা আলাদাভাবে সার্বভৌম বলা যায় না।

অনেকে শুধু ইংল্যান্ডকেই যুক্তরাজ্য ভেবে ভুল করে থাকেন। কারণ যে চারটি দেশ নিয়ে যুক্তরাজ্য গঠিত, তার মধ্যে ইংল্যান্ড আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাকি তিনটি দেশের চাইতে বড়। এর চাইতেও মজার ব্যাপার হচ্ছে লন্ডন হলো যুক্তরাজ্যের রাজধানী, যা আবার ইংল্যান্ডেরও রাজধানী! ইংল্যান্ড ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড- এই তিনটি দেশেরই আলাদা আলাদা পতাকা, রাজধানী, সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং সংসদীয় ব্যবস্থাও রয়েছে।

ইংল্যান্ডের উত্তর দিকে রয়েছে স্কটল্যান্ড, পশ্চিমে ওয়েলস এবং উত্তর-পশ্চিমে একটু দূরেই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। খোদ যুক্তরাজ্যের মানুষই কখনো কখনো ভুলে যান যে, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড তাদেরই অংশ!এই চারটি দেশের নাগরিকদের আবার নিজ দেশের পাসপোর্ট নেই। তাদের সবাইকে বলা হয় ব্রিটিশ নাগরিক। চার দেশের সবার পাসপোর্ট এক- ব্রিটিশ পাসপোর্ট। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে- তারা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ব্রিটিশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যের পুরো নাম হচ্ছে- ‘ইউনাইডেট কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড’।

এবার একটু ইতিহাস ঘুরে আসা যাক। মানে কীভাবে এই চার দেশ এক হয়ে যুক্তরাজ্য তৈরি হলো তা জানা যাক!

৯২৫ সাল: কিংডম অফ ইংল্যান্ড – তখনকার সময়ের অ্যাংলো স্যাক্সন উপজাতি গুলোর একীভূতকরণের মাধ্যমে জন্ম হয় কিংডম অফ ইংল্যান্ড বা ইংল্যান্ডের রাজত্ব।

১৫৩৬ সাল: কিংডম অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস – ইংল্যান্ডে সাথে ওয়েলস যোগ হলো। রাজা অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রণীত একটি বিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস মিলে একটি দেশ (State) গঠন করে এবং একই আইনের আওতায় পরিচালিত হয়।

১৭০৭ সাল: দ্য কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন – দ্য কিংডম অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের সাথে কিংডম অফ স্কটল্যান্ড যুক্ত হয়ে গঠন করে দ্য কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন

১৮০১ সাল: ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড – কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেনের সাথে কিংডম অফ আয়ারল্যান্ড যুক্ত হয়। এবং আবারো নাম পাল্টে গঠিত হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড।

১৯২২ সাল: ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড –১৮০১ সালে যুক্ত হওয়া আয়ারল্যান্ডের একটি অংশ (সাউথ আয়ারল্যান্ড, যা এখন রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড) ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে নর্থ আয়ারল্যান্ড ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হয়ে থেকে যায় এবং সবশেষে নাম দাঁড়ায় ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড!

তাহলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম কবে গঠিত হয়েছিল? কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে থাকেন, ১৭০৭ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের একীভূত হওয়ার মাধ্যমেই ইউনাইটেড কিংডম গঠন হয়েছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের যুক্ত হবার আগপর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নাম যুক্তরাজ্য (ইউকে) হয়ে ওঠেনি। এতক্ষণ শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের ব্যাখা পড়লেন। এবং এর মাঝেই ঢুকে গেল একটি টার্ম- গ্রেট ব্রিটেন। এবার চলুন এই গ্রেট ব্রিটেনের দিকে একটু নজর দেয়া যাক।

গ্রেট ব্রিটেন

প্রথমেই বলে রাখি, গ্রেট ব্রিটেন বলতে কোনো দেশ বোঝায় না। গ্রেট ব্রিটেন হচ্ছে বিশাল একটি দ্বীপ বা ভূখণ্ডের নাম। এখানে ‘গ্রেট’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ, এই দ্বীপটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের (The British Isles) মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘অখন্ড’ দ্বীপ। অনেকে আবার গ্রেট ব্রিটেন বলতেও ইংল্যান্ডকে বোঝেন। তবে আসল ব্যাপার হচ্ছে, এই দ্বীপের মধ্যে ইংল্যান্ডের সাথে স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসও রয়েছে।কিন্তু তিনটি দেশ আবার পুরোপুরিভাবে গ্রেট ব্রিটেন নামক দ্বীপখন্ডের মধ্যে পড়েনি। অর্থাৎ এই তিনটি দেশের সম্পূর্ণ অংশ গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে পড়েনি।

ইংল্যান্ডের ওয়েইট দ্বীপ (Isle of Wight), ওয়েলসের আঙ্গেলসি দ্বীপ (Isle of Anglesey), স্কটল্যান্ডের দক্ষিণের ক্লায়েড দ্বীপ (Island of the Clyde) এবং উত্তরের স্কটিশ হেব্রেডিস (Hebrides), অর্কনি দ্বীপ (Orkney Island), শেটল্যান্ড দ্বীপ (Shetland Islands) নামের বেশ কয়টি ছোট ছোট দ্বীপ গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ গ্রেট ব্রিটেন বলতে একটি ‘অখণ্ড’ দ্বীপকে বোঝানো হয়ে থাকে। তাই এই ছোট ছোট দ্বীপগুলো ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের অংশ হয়েও গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হতে পারেনি। তবে এই ছোট ছোট দ্বীপগুলো যুক্তরাজ্যের অংশ! আর যেহেতু গ্রেট ব্রিটেন একটি অখণ্ড দ্বীপ, তাই ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের মতো নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হয়েও গ্রেট ব্রিটেনের অংশ না।

গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের নাম কেন গ্রেট ব্রিটেন হলো তার একটি সাধারণ ব্যাখ্যা আগের অনুচ্ছেদে দেয়া হয়েছে। তবে একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক এই নামকরণের পেছনে আসল ব্যাখ্যা কীরকম। গ্রেট ব্রিটেনের ব্রিটেন অংশটুকু এসেছে রোমান শব্দ ‘ব্রিটানিয়া’ থেকে। কিন্তু ব্রিটেনের আগে গ্রেট কীভাবে যুক্ত হলো তা নিয়ে দুই ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে।প্রথমত, ব্রিটেনকে এর প্রায় অনুরূপ ফরাসি প্রতিবেশি অঞ্চল ব্রিটনিক (উচ্চারণেও কাছাকাছি) থেকে আলাদা করার জন্যই এর পূর্বে গ্রেট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় মতবাদ অনুসারে, রাজা প্রথম জেমসের অহংকারের প্রমাণস্বরূপ ব্রিটেনের আগে গ্রেট শব্দটি বসানো হয়েছে। এই অহংকারী রাজা ঢালাওভাবে সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি শুধু পুরনো রোমান ব্রিটেনের রাজা নন, বরং পুরো দ্বীপের রাজা ছিলেন। তিনি নিজেকে কিং অফ গ্রেট ব্রিটেন হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন।

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং আয়ারল্যান্ড

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত অনেকগুলো ছোট-বড় দ্বীপের সমষ্টি। এটি গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, আইল অফ ম্যান, আইলস অফ স্কিলি, চ্যানেল আইল্যান্ড সহ ছোট-বড় মোট ৬,০০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সবচাইতে বড় দ্বীপের নাম গ্রেট ব্রিটেন এবং দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীপের নাম আয়ারল্যান্ড।

অর্থাৎ শুধু ‘আয়ারল্যান্ড’ বলতে একটি দ্বীপ বোঝায়। এই আয়ারল্যান্ড দ্বীপই ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড’ এবং ‘রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড’ নামে দুই ভাগে বিভক্ত। শুরুতেই বলে এসেছি, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অংশ। তাহলে বাকি অংশ রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড কীসের অংশ? তারা কি যুক্তরাজ্য এবং গ্রেট ব্রিটেন কোনোটারই অংশ না?

না, বর্তমানে তারা এই দুটোর কোনোটিরই অংশ না। ১৮০১ সালে পুরো আয়ারল্যান্ড দ্বীপ ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আবার ১৯২২ সালে এর একটি অংশ নিজেদেরকে যুক্তরাজ্য থেকে সরিয়ে নেয় এবং রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গঠন করে।

ইংল্যান্ড

যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কে যদি এতক্ষণে মোটামুটি একটি পরিস্কার ধারণা চলে আসে, তাহলে ইংল্যান্ড সম্পর্কেও আশা করি বুঝে গিয়েছেন। তা-ও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের মতো ইংল্যান্ডও একটি একক দেশ। যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত চারটি দেশের মধ্যে জনসংখ্যা এবং আয়তনের দিক দিয়ে ইংল্যান্ড সর্ববৃহৎ। আর যুক্তরাজ্য গঠনে ইংল্যান্ড একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবদান রেখেছিল। আর আগেই বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন, আবার যুক্তরাজ্যেরও রাজধানী। তাই ইংল্যান্ড বলতে যুক্তরাজ্য, আর যুক্তরাজ্য বলতে মানুষ ইংল্যান্ড গুলিয়ে ফেলে।

সারমর্ম:

যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম – একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড, যার মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত। চারটি দেশ মিলে একটি সার্বভৌম দেশ, যার রাজধানী আবার ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে।

গ্রেট ব্রিটেন – গ্রেট ব্রিটেন কোনো দেশ নয়। এটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের একটি সর্ববৃহৎ দ্বীপ। যুক্তরাজ্যের নর্দান আয়ারল্যান্ড বাদে বাকি তিন দেশের অখণ্ড অংশ নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন গঠিত।

ইংল্যান্ড – যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত চারটি দেশের মধ্যে একটি দেশ। কিন্তু দেশটি সার্বভৌম দেশ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Trying to access array offset on null in /home/bcsaid/instabangla.com/wp-content/themes/disto/single.php on line 260