কন্টেন্ট রাইটিং এর খুঁটিনাটি-পর্ব-৩ (কন্টেন্ট রাইটিং এর কিলার টিপস)

এর আগে আমরা প্রথম দুই পর্বে কন্টেন্ট রাইটিং এর নানা বিষয় নিয়ে জেনেছি এবং আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবার আমরা কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কিত আর ও কিছু তথ্য আপনার সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এমনকি তুলে ধরবো কিভাবে কন্টেন্ট রাইটিং করে কিংবা লিখালিখি করে আপনি উপার্জন ও কর‍তে পারবেন। আপনাদের সুবিধার্থে কন্টেন্ট রাইটিং কি ও কত প্রকার তা প্রথম দুই পর্বের মতো এ পর্বে ও তুলে ধরলাম৷

কন্টেন্ট রাইটিং কি? ও কত প্রকার?(What is Content Writing? How Many Types?):

কন্টেন্ট রাইটিং কি এটা যদি সহজ ভাষায় বলি তাহলে এটি হচ্ছে যেকোনো একটি বিষয়ের উপর কিংবা যেকোনো একটি বিষয়বস্তুর উপর লিখা৷ এই লিখা সাধারণত ৩০০-৫০০ শব্দ, ৫০০-১০০০ শব্দ কিংবা ১ হাজার থেকে দুই – তিন- পাঁচ হাজার পর্যন্ত ও হতে পারে৷ অর্থাৎ, আপনি যেকোনো টপিক কিংবা বিষয়বস্তুর উপর আপনার ইচ্ছানুযায়ী শব্দ সংখ্যার ভিতরে একটি কন্টেন্ট লিখবেন। কন্টেন্ট রাইটিং ব্যাপারটা আমরা আর্টিকেল রাইটিং হিসেবে ও জানি।

কন্টেন্ট রাইটিং অনেক ধরনের আছে। যেমন : এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট রাইটিং, এফিলিয়েট কন্টেন্ট রাইটিং, ব্লগ কন্টেন্ট রাইটিং, ই-বুক, ম্যাগাজিন কন্টেন্ট রাইটিং, পত্র পত্রিকায় কন্টেন্ট রাইটিং, একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ট্রান্সলেশন, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন রাইটিং, নিউজ রাইটিং, শর্ট স্টোরি / আর্টিকেল রাইটিং। তাছাড়া আর ও অনেক ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং করা যেতে পারে।

প্রিয় পাঠক, আপনারা জেনে অবাক হবেন না কিন্তু। কন্টেন্ট রাইটিং কিংবা লেখালেখি করে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। সেই টাকা দিয়ে আপনি চাইলে আপনার নিজের ব্যাক্তিগত খরচে ও ব্যবহার করতে পারবেন৷

কেনো আপনার কন্টেন্ট রাইটিং করা উচিত?(Why Should You Do Content Writing?):

Why Should You Do Content Writing.jpeg

Why Should You Do Content Writing,Image Credit: interactivewebstation.com

১/ কন্টেন্ট রাইটিং অন্য কোনো চাকরীর মতো না। আপনি কাজটা সম্পূর্ণ অনলাইনেই করতে পারবেন। এখানে প্রতিনিয়ত কন্টেন্ট রাইটার এর চাহিদা থাকে কারণ, অনেকে ব্যবসায়ীক কাজে কন্টেন্ট রাইটারদেরকে হায়ার করে উনাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত আপডেট করার জন্য৷

২/ কন্টেন্ট রাইটিং করে ভালো উপার্জন সম্ভব। তবে, কন্টেন্ট রাইটিং উপার্জন নির্ভর করে সম্পূর্ণ আপনার নিশ, আপনার দক্ষতা এবং আপনার অভিজ্ঞতার উপর৷ তবে, এক্ষেত্রে অনেক সময় ভাষা অনুযায়ী ও একজন কন্টেন্ট রাইটিং উপার্জন করে। যেমন: যারা ইংরেজিতে কন্টেন্ট লিখে তারা অনেক ভালো সম্মানী পায় সে তুলনায় যারা বাংলায় কন্টেন্ট রাইটিং করে উনারা অনেক কম সম্মানী পায়। তবে, বাংলা ভালো কিছু ওয়েবসাইট অনেক ভালো সম্মানী দিয়ে থাকে।

৩/ কন্টেন্ট রাইটিং করতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো ফ্যাক্ট না৷ শুধু আপনার কাজ হচ্ছে আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়ের উপর আপনার ক্লায়েন্ট যেমন কন্টেন্ট চাইবে আপনি আপনার ক্লায়েন্টকে তেমন কন্টেন্ট দিবেন৷ তবে, আপনি কন্টেন্ট রাইটিং যেসব বিষয়/ নিশের উপর লিখবেন তার জন্য আপনাকে বই পড়তে হবে, গুগল থেকে অন্য লেখকদের কন্টেন্ট পড়তে হবে৷ তাদের কন্টেন্ট পড়ে লিখার আইডিয়া এবং স্ট্র্যাটিজি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে আপনার৷

৪/ কন্টেন্ট রাইটিং এর সুবিধা হচ্ছে আপনি অনেক ধরনের টপিকের মধ্যে আপনার পছন্দমতো অর্থাৎ যে বিষয়ে আপনি সবচেয়ে ভালো লিখতে পারেন সে বিষয়ে লিখতে পারবেন৷ আর ও একটি অন্যতক সুবিধা হচ্ছে আপনি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসে কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারবেন এবং আপনার ইচ্ছামতো সময়ে।

৫/ বাংলাদেশে অনেক তরুন ছেলেপেলেরা এখন কন্টেন্ট রাইটিং করে নিজের হাত খরচের টাকা জোগাচ্ছে। এতে তাদের লিখালিখি অভ্যাস ও হলো পাশাপাশি রাইটিং এর মতো একটা স্কিল ও তৈরী হলো। আর টাকা উপার্জন তো আছেই!

এতো এতো সুবিধা এবং ভালো দিক থাকার সুবিধার্তে আপনার ও শুরু করা উচিত কন্টেন্ট রাইটিং যদি আপনার ইচ্ছা থাকে। শুধু দরকার একটু রিসার্চ আর ঘাটাঘাটি।

লিখালিখি করে কিভাবে উপার্জন করবেন?(How To Earn by Writing?):

How To Earn by Writing.jpg

How To Earn by Writing,Image Credit: usnews.com

লিখালিখি করে উপার্জনের কথাটা চিন্তা করার আগে আপনাকে আগে কিভাবে লিখালিখি করতে হয়, কি নিয়মে লিখালিখি করতে হয়, কিভাবে নিজের দক্ষতা এবং জ্ঞান বাড়ানো যায় সেদিকে ও মনোযোগ দিতে হবে। তো, চলুন এখন জেনে নেই কিভাবে লিখালিখি করে উপার্জন করতে পারবেন।

১/ প্রথমে আপনার পছন্দমতো একটি ওয়েবসাইট বানান। নিজে ওয়েবসাইট বানাতে না পারলে অন্য একজনকে দিয়ে ওয়েবসাইট বানিয়ে দিন৷ এরপর আপনার ওয়েবসাইটে আপনিই লেখক হয়ে যান৷ তবে, নিজের ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন করতে হলে আগে আপনাকে অনেক সময় এবং ধৈর্য ধরতে হবে৷ কারণ, ধৈর্য না থাকলে এসব কাজ সম্ভব না। নিজের ওয়েবসাইটে হয়তো আপনি শুরুর দিকে ইনকাম না ও করতে পারেন তবে একটা সময় এসে আপনি ভালো ভিজিটরের মাধ্যমে। শুধু ভিজিটর নয় আপনি ইনকাম করতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিংবা আপনার ওয়েবসাইটে পণ্য কেনা- বেচার মাধ্যম দিয়ে। তবে, একবার যদি আপনার ওয়েবসাইট দাঁড়িয়ে যায় তখন আপনার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এরপর থেকে আপনার মাস শেষে ভালো একটা এমাউন্ট আসবে ওয়েবসাইট থেকে৷

২ / অনেক অভিজ্ঞ কন্টেন্ট রাইটাররা মাস শেষে লাখ টাকা ও আয় করছে শুধু কন্টেন্ট লিখে৷ দেশের পত্র-পত্রিকায় অনেকে ফিচার লিখে প্রতি ফিচার অনুযায়ী কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করে পাচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা থেকে৷ তবে, আপনাকে শুরুটা করার আগে একটা ভালো প্লাটফর্ম বেছে নিতে হবে যেখানে আপনি একটি প্লাটফর্মের পাশাপাশি সেখানে আপনি আপনার পছন্দমতো নিশ নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এরপর আপনি কাজ করা শুরু করে দিন আপনার পছন্দমতো।

৩/আপনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলি দিয়ে অনলাইনে লেখার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এগুলো এমন মার্কেটপ্লেস যেখানে আপনি একটি প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন এবং ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারবেন। বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্ম আপনাকে পোর্টফোলিও তৈরি করতে এবং ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রিভিউ সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়। আর একটি সুবিধা হ’ল নিরাপদ পেমেন্ট প্রদান প্রক্রিয়া। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলি লেখক, ক্লায়েন্ট বা তাদের উভয়কেই চার্জ দেয়। সুতরাং, শর্তাদি এবং শর্তাদি পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

৪/ অন্যের ওয়েবসাইটের জন্য লেখক হিসেবে কাজ করুন৷ আপনি শুধু ইংরেজিতে দক্ষ থাকেন তাহলে আপনার কাজের অভাব থাকে না যদি আপনি কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়টি এবং ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে থাকেন। যেমন : একটি ওয়েবসাইট আছে যারা হাইকিং, মানুষের ব্যাক্তিত্ব, ট্রাভেল ব্লগের জন্য প্রতি শব্দের জন্য ০.৪০ ডলার থেকে ১ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে৷ ট্রাভেল ব্লগ, হাইকিং ব্লগ শুধু এসব ব্লগই নয় প্রযুক্তি, খেলাধুলা, টিপস এন্ড ট্রিক্স সবকিছুর উপর আপনি কন্টেন্ট রাইটিং করে ভালো উপার্জন করতে পারবেন। তবে, বাংলা ভাষায় কন্টেন্ট রাইটিং এর ইনকাম কম ইংরেজির তুলনায় কিন্তু বেশ কয়েকটি বাংলা ওয়েবসাইট বেশ ভালো সম্মানী দিয়ে থাকে কন্টেন্ট এর মান এবং সম্মানী অনুযায়ী। যেমন : রোর বাংলা, প্রথম আলো৷

৫/ কন্টেন্ট রাইটিং এর মধ্যে আপনি স্পনসর পোস্ট করে ও উপার্জন করতে পারবেন। এটা ব্যবহার করে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মানুষজন কন্টেন্ট রাইটার হায়ার ( Hire) করে তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়।

পরিশেষে বলবো, লেখার জন্য অর্থ উপার্জন করার চিন্তা করবেন না। কৌশলটি কেবল দক্ষতা অর্জনের। আপনার নিজের একটি ভাল ব্লগ শুরু করুন এবং অনুশীলন করবেন না যতক্ষণ না আপনার কাছে দক্ষতার একটি ভাল স্তর না থাকে

আর অভিজ্ঞ লেখকরা সহজেই এই জাতীয় জিনিশগুলোর সাথে উচ্চতর হারের জন্য আবেদন করতে পারেন বা ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন এবং ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি কাজ করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *